নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির টার্গেট ‘২০২৩’

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২ | ০৮:১০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:৫১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিএনপির টার্গেট ‘২০২৩’

বিএনপির লোগো। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে। তাই এখন ২৩ সালকে ঘিরেই বিএনপির সব পরিকল্পনা। এই সময়ের মধ্যেই দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দল পুনর্গঠনসহ সরকারবিরোধীদের নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গেও একের পর এক বৈঠক করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির কাজ করছে দলটি।

বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, আর কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না বিএনপি। আর এসব দাবি আদায়ের একমাত্র উপায় রাজপথ। রাজপথে জোরালো আন্দোলন ছাড়া কোনোভাবেই দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। তাই নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল দৃঢ় করাসহ জোটের শরিকদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে যেসব প্রস্তাব আসবে, তার সমন্বয়ে তৈরি হবে রাজপথের আন্দোলনের রূপরেখা।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে। এ সরকারের পতন না ঘটিয়ে কোনো সমঝোতা নয়। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না, এটাই বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বরং কীভাবে এ সরকারকে বিদায় করা যায়, তা নিয়ে জোরালোভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা সরকার পতনের দাবিকে রাজপথের আন্দোলনে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। অভীষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে আরও কিছু দিন সময় নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বন্যার কারণে বন্ধ থাকা দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম ফের শুরু করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে বোঝাপড়ার পর্ব শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের সংলাপে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশ না নেওয়া।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে বিএনপি মহাসচিব গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। প্রথম দফায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপের পর গত ২৪ জুলাই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সঙ্গে সংলাপ করেন তিনি। এ ছাড়া এ পর্যন্ত বিএনপি ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্র্যাটিক দল, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), এনডিপি (একাংশ) ও ইসলামিক পার্টির (একাংশ) সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আশাবাদী, খুব শিগগরিই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি-সংগঠনের মধ্যে একটা ঐকমত্য তৈরি হবে। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, তাদের পদত্যাগ করতে হবে- এই দাবিতেই যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যেভাবে আগেভাগেই হামলা ও মামলার পথে হাঁটছে, তাতে মাঠপর্যায়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া ছাড়া সমাধান হবে না। সব সমস্যার সমাধান হবে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন রাজপথে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। অঙ্গসংগঠনগুলোকেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

তারা আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখার নানা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিকল্প জোট দাঁড় করানো; বিএনপির মধ্যে ভাঙন ধরানো। বিএনপির মিত্রদের কাছে টানার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বিরোধী নেতা-কর্মীদের ভয় দেখাতে হামলা-মামলার পথে হাঁটা, সব মিলিয়ে বিএনপিকে দুর্বল অবস্থায় রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, সিনিয়র নেতাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান দুটি কাজ করতে চাচ্ছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার মতামত নেওয়া এবং দীর্ঘ দিন দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়া নেতাদের রাজনীতিতে সক্রিয় করা। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গে যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে প্রয়োজনে তাদেরও দলের পক্ষে কাজে লাগানো যায় কি-না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেবে, তা না হলে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি এবার আর আওয়ামী লীগের প্রতারণার (নির্বাচনী) ফাঁদে পা দেবে না। আবার দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না। সুতরাং এবারের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আর এসব হামলা-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে না। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। রাজপথেই এবার ফয়সালা হবে।

সার্বিক বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি বরাবরই বলে আসছে দলীয় সরকারের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো কোনো কমিশন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না। একমাত্র নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চলমান সংকট উত্তরণে একমাত্র পথ। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। প্রমাণ হয়েছে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন কতটা ক্ষমতাহীন। আর সে কারণেই বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, করব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন আরও বেগবান করব। সময় হলেই আমরা আরও শক্তভাবে রাজপথে নামব।

শেয়ার করুন