নিউইয়র্ক     সোমবার, ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কে ভারী বর্ষণে বন্যা, জরুরি অবস্থা জারি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৮:৩২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউইয়র্কে ভারী বর্ষণে বন্যা, জরুরি অবস্থা জারি

টানা বৃষ্টিতে নিউইয়র্ক শহরের বেশ কিছু এলাকা ডুবে গেছে। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টি না কমায় বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণে নিউইয়র্কে দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউএস) জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কের প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গেছে। ফুটপাত তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি কমছে না বলে পানি নামতে পারছে না।

ব্রুকলিন, কুইন্স ও ব্রঙ্কস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া দফতর। ম্যানহাটনের সড়কে অনেক গাড়ি পানিতে আটকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নিউইয়র্কের বেশির ভাগ এলাকায় গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে রাতভর ৫ ইঞ্চিরও বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭ ইঞ্চিও ছাড়িয়ে গেছে এবং বৃষ্টিপাত এখনো চলমান রয়েছে। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হকোল সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ভয়ংকর, এমনকি জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নিজের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় গভর্নর ক্যাথি লিখেছেন, ‘সমগ্র অঞ্চলজুড়ে যে চরম বৃষ্টিপাত দেখছি, তাতে আমি নিউ ইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড এবং হাডসন ভ্যালিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে নিরাপদ থাকার জন্য পদক্ষেপ নিন এবং পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় চলাফেরার চেষ্টা করবেন না।’

নিউইয়র্কের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার জেচারি ইসকল বলেন, গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত দুই বছরের মধ্যে গতকাল ছিল সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল দিন। এই পরিস্থিতি আবহাওয়ার প্রতি নিবিড় মনোযোগ দেওয়া এবং আবহাওয়া সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়। বিষয়টি এখন আর হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

অন্যদিকে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় তিনি বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নিউইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড ও হাডসন ভ্যালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মৃত্যু অথবা বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। হাডসন নদীর তীরে অবস্থিত নিউ জার্সির হোবোকেন শহরেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করার নিউইয়র্ক শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস শহরের মানুষকে সতর্ক থাকারা পরামর্শ দিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘পানি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কিছু সাবওয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের ভেতর যাতায়াত করা হঠাৎ করে খুবই কঠিন হয়ে গেছে।’ নাগরিকরা যেন ‘অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন’ করে চলে সেদিকে জোর দিয়েছেন তিনি।

নিউইয়র্ক শহররে যাতায়াত সেবা প্রদানকারী সংস্থা মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সি জানিয়েছে পানি উঠে যাওয়ায় কয়েকটি সাবওয়ে লাইনে চলাচল পুরোপুরি বাতিল করে দেয়া হয়। অনেক স্টেশনও বন্ধ করে দেয়া হয়। শহরের উত্তরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঐ অঞ্চলে উদ্ধার কর্মীরা বাতাস দিয়ে ফোলানো নৌকা ব্যবহার করে অনেক মানুষকে উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ঘটনাস্থলের ছবি আর ভিডিওতে দেখা যায়, তুমুল বর্ষণের মধ্যে হাঁটু পানিতে হাঁটছে মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করা অনেক ভিডিওতে দেখা যায় যে সাবওয়ে স্টেশনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পানি চুঁয়ে পড়ছে।

এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা রোহিত আগারওয়াল জানান, শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঘণ্টায় ১ দশমিক ৭৫ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টি সামাল দিতে পারে না। ব্রুকলিন নেভি ইয়ার্ড থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, শুক্রবার এক ঘণ্টায়ই ২ দশমিক ৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

তিনি মন্তব্য করেন, ‘ব্রুকলিনের কিছু অংশ যে এই বৃষ্টিতে ভুগবে, তা স্বাভাবিক।’ ব্রুকলিনের সাউথ উইলিয়ামসবার্গ অঞ্চলেও হাঁটু পানিতে ড্রেন পরিষ্কার করার ভিডিও দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ১৮৮২ সালের পর থেকে এই প্রথমবার সেপ্টেম্বর মাসে এত বেশি বৃষ্টি হলো বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অধিদপ্তর— ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস।

এর আগে নিউইয়র্ক ২০২১ সালের আগস্টে এক দফা বন্যায় ডুবেছিল। সেসময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইডার প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। নিউইয়র্কের অনেক ভবনের বেজমেন্ট এই বন্যায় ডুবে যায়। পাশাপাশি ১৩ জন শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাণ হারান।

শেয়ার করুন