নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী ফুটবলের ভাগ্যাকাশে শঙ্কার মেঘ

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩ | ০২:২৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩ | ০২:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নারী ফুটবলের ভাগ্যাকাশে শঙ্কার মেঘ

বাংলাদেশের ফুটবলে আশার শেষ আলোটুকু জ্বেলে রেখেছেন নারীরা। গত সেপ্টেম্বরে নারী জাতীয় দল প্রথমবারের মতো জিতেছে সাফ শিরোপা। এসেছে বয়সভিত্তিক সাফেও সাফল্য। সিঙ্গাপুরে নারীদের অনূর্ধ্ব-১৭ দল পেরিয়েছে এশিয়ান বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ড। সব মিলিয়ে নারী ফুটবল নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছে ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। কিন্তু সেই নারী ফুটবলে হঠাৎ করে ঘটতে শুরু করেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎকে শঙ্কায় ফেলে দিল কিনা, এমন চিন্তা অমূলক নয়।

জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। তিনি চলে যাচ্ছেন চীনে। আঁখি জানিয়েছেন, ‘চীনে বিকেএসপির মতো একাডমিতে যাব আমি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ঈদের পর আমার যাওয়া হবে।’ স্বপ্না বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার। তিনি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে শিরোপা জয়ে রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা। অথচ মাত্র ২২ বছর বয়সেই স্বপ্না আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বপ্না আর আঁখির পর বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে গোলাম রাব্বানি ছোটনের পদত্যাগের ঘোষণা। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবলের সমস্ত অর্জনের কারিগর কোচ ছোটন। তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বরাবর। ছোটন বলেন, ‘আমি নারী দলের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী মাস পর্যন্ত আছি। গত সাত-আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। পারিবারিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবনে সময় দিতে পারিনি। একের পর এক টুর্নামেন্টে যে শারীরিক-মানসিক চাপ সেটা থেকে আমার বিশ্রাম দরকার।’

সাফজয়ী নারী দলে যেন ভাঙনের সুর। কিন্তু কেন? স্বপ্না অবসর নেওয়ার কারণ জানাননি। তবে অনেকেই মনে করছেন, ফুটবল নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তার এমন সিদ্ধান্ত। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর নারী জাতীয় দল কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। তাদের পাঠানো হয়নি মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে। যা নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। এছাড়া নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ঘোষণা দিয়েও শুরু করা যায়নি। স্বপ্না সুযোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় নারী ফুটবল লিগে উড়িষ্যার হয়ে খেলার। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কারণে তার যাওয়া হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তিনি আইকন প্লেয়ার হিসেবে বড় পারিশ্রমিকের আশা করেছিলেন। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু না হওয়ায় হতাশ তিনি। আঁখির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। তিনি ক্যারিয়ার গড়তে চান বিদেশের মাটিতে। তার জন্য চীন ছাড়াও সুইডেনের অফার ছিল।

আঁখি-স্বপ্নার দোষ নেই। একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের জন্য মাঠের খেলায় সক্রিয় থাকা জরুরি। নিজেদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করেন তারা মাঠে খেলেই। আর বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের বেশিরভাগ এসেছেন নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে। ফুটবল খেলে নিজের ও পরিবারের সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখেন তারা, সেটা অন্যায়ও না। কিন্তু খেলা তো মাঠেই নেই। সাফ জয়ের পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও নারী ফুটবল দল কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাড়ানো সম্ভব হয়নি খেলোয়াড়দের বেতন। সব মিলিয়ে নারী দলের ফুটবলারদের ঘিরে ধরেছে অবসাদ আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। কিন্তু নারী দলের প্রধান চরিত্র ছিলেন। কোচ ছোটনের পেছনে কাজ করেছে তার মস্তিষ্ক। স্মলির সময়ে নারী ফুটবল অভাবিত সাফল্য পেয়েছে নিঃসন্দেহে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তো দাবি করেছেন, দেশের নারী ফুটবলে সাফল্য এসেছে মূলত স্মলির কারণে। ২০১৬ সালে স্মলি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। তার সঙ্গে বাফুফের চুক্তি রয়েছে আগামী ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত। স্মলিকে নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। কাজ করার কথা নারী-পুরুষ উভয় দলের জন্য। কিন্তু তিনি নারী দলের হয়েই বেশি কাজ করেন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রধান কোচ হিসেবেও বেনামে তাকে কাজ করতে দেখা গেছে। সেই স্মলিও সম্প্রতি চাকরি ছাড়ার কথা বলেছেন। তবে বাফুফে ইংলিশ ভদ্রলোককে যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চায়। সালাউদ্দিন বলেন, ‘ছোটন সৎ ও পরিশ্রমী। তবে তার অভাব পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু স্মলি চলে গেলে নারী ফুটবলের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

স্মলি থাকছেন কিনা নিশ্চিত না। তবে শোনা যাচ্ছে, স্বপ্না-আঁখির পথ ধরে অনেকেই ছাড়তে পারেন ফুটবল। কারণ নারী ফুটবলারদের আর্থিক ভবিষ্যৎ নেই। নারী ফুটবল লিগে অনেকেই খেলেন নামমাত্র পারিশ্রমিকে। বাফুফের কাছে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি করেও কোনো সফলতা আসেনি। সব মিলিয়ে হতাশায় আচ্ছন্ন এখন নারী ফুটবলাররা। এই দায় বাফুফের কর্তারা এড়াতে পারবেন না। তারা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা নারী ফুটবলারদের আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। কী কারণে মেয়েরা থাকবে ফুটবলে? আপাতত জবাব দেওয়ার কেউ নেই। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল

শেয়ার করুন