নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘রমজান’ যেভাবে ‘রামাদান’ হয়ে গেল

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:২৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:২৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
‘রমজান’ যেভাবে ‘রামাদান’ হয়ে গেল

বাঙালিরা রোজার মাসকে ‘রমজান’বলেই সম্বোধন করে থাকেন। বাঙালিরা তো বটেই – মোটামুটি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই মুসলিমরা প্রায় আবহমানকাল থেকে সেটাই জেনে এসেছেন। কবি নজরুল ইসলামের লেখা গান ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’ তো অমর হয়ে আছে।

কিন্তু এখন রোজার মাসে আপনি যদি ভারতের কোনো সুপারমার্কেটে ঢুকতে যান, হয়তো আপনার চোখে পড়বে আপনাকে স্বাগত জানাবে ‘রামাদান করিম’লেখা বিরাট ব্যানার বা পোস্টার। ‘রামাদান’ উপলক্ষে স্টোরে কী কী স্পেশাল অফার আছে, সেই লিফলেটও হয়তো হাতে গুঁজে দিয়ে যাবে কেউ! শুধু ভারত নয় বাংলাদেশেও এই একই অবস্থা। হোয়াটসঅ্যাপে বা ইমেলেও এর মধ্যেই অনেকের ফোনে চলে এসেছে ‘রামাদান মুবারক’বার্তা। কিন্তু ভারতের মুসলিমরা চিরকাল যাকে রমজান বলে জেনে এসেছেন, হালে সেটাই কীভাবে ধীরে ধীরে রামাদানে পরিণত হল?

ইসলামের গবেষক ও ইতিহাসবিদ কিংশুক চ্যাটার্জি বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘আসলে ভারতে ইসলামের মূল স্রোত যখন প্রথম আসে, তখন তা ছিল প্রবলভাবে পারস্য ভাবধারায় প্রভাবিত। আর ফার্সিতে যেহেতু শব্দটা রমজান – যেখানে জ-য়ের উচ্চারণটা ত-র মতো – তাই ভারতীয়রাও সেটাই বলতো। বাংলায় ত উচ্চারণটা নেই বলে বাঙালি মুসলিম তো পরিষ্কার রমজান উচ্চারণ করত’

তিনি আরো বলেছেন, ‘কিন্তু গত এক-দেড়শো বছর ধরেই ভারতীয় ইসলামে আরবিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরব বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগও হালে অনেক বেড়েছে। আরবিতে জ উচ্চারণটা নেই, তার জায়গায় ওরা বলে ধ আর ত-র মাঝামাঝি একটা কিছু – আর সেটা অনুসরণ করে ইদানীং ভারতেও রামাদান বলার চল শুরু হয়েছে’ তবে রমজান যেভাবে ধীরে ধীরে রামাদান হয়ে যাচ্ছে, সেটাকে ‘ক্রমবর্ধমান আরবি প্রভাবের’ চেয়ে বরং একটা ‘শুদ্ধিকরণের প্রবণতা’ হিসেবেই দেখছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক কাজী সুফিওর রহমান।

ড: রহমান বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটা উচ্চারণগত ব্যাপার। দেখুন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নিয়ত বাড়ছে, তাই অনেকেই মনে করছেন এই সুযোগে আমার বিদেশি শব্দের উচ্চারণটাও ঠিক করে নিলে ক্ষতি কী? আসলে আমাদের এটা বুঝতে হবে আরবি ভাষায় ‘জ’ শব্দটাই নেই – ওই জায়গায় তারা যেটা বলে সেটা অনেকটা ধ-এর কাছাকাছি।’

দেওবন্দে দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা আবদুল খালিক, ‘দেখুন কোরানে তো রামাদান-ই বলা আছে, কাজেই ওটাই ঠিক মানতে হয়। ইসলামে শিক্ষিত লোকজন রামাদানই বলেন, যারা অতটা পড়াশুনো জানেন না তারা বলেন রমজান’।

সাথী / পরিচয়

শেয়ার করুন