নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণসীমা অতিক্রম, নতুন সীমা নির্ধারণে রিপাবলিকানদের নানা শর্ত

যুক্তরাষ্ট্র কি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১:৩৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ০৫:৪১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্র কি ঋণখেলাপি হওয়ার পথে

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে। গত ১৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার বর্তমানসীমা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার এর ঋণসীমা অতিক্রম করায় ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে । তবে সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকবারই প্রশাসন ঋণসীমা অতিক্রম করেছে এবং কিছুদিনের মধ্যে কংগ্রেস (সিনেট ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস) ঋণসীমা পুননির্ধারণ করেছে। এবার অবশ্য হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকানরা ঋণসীমা পুননির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কিছু শর্ত আরোপ করেছে যার মধ্যে উল্লেখেযাগ্য হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিতে বাইডেন প্রশাসনেনর ব্যয় হ্রাস করা। ব্যয় হ্রাসের কোন প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

তবে আগামী জুন মাসের মধ্যে ঋণসীমা পুননির্ধারণে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জনগণের জীবিকা এবং বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন গত সপ্তাহে নতুন হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির কাছে একটি চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন । ঋণের সীমা হলো ইউএস ট্রেজারির বিল পরিশোধের জন্য ধার করার অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ। বর্তমান এই সীমা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। সামাজিক নিরাপত্তা এবং চিকিৎসাসেবা, নাগরিকদের ট্যাক্স ফেরত, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেতন এবং জাতীয় ঋণের সুদ পরিশোধ করার জন্য সরকার ঋণ নিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর আদায়ের চেয়ে বেশি খরচ করলে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে থাকে। গত ২০০১ সাল থেকেই সরকার ঋণনির্ভর বলে হোয়াইট হাউস কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার জানিয়েছে। প্রতি বছরই সরকারি কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য ধার নিয়েছে সরকার।
ব্যাংক অব আমেরিকার বিশ্নেষকরা চলতি সপ্তাহে গ্রাহকদের কাছে পাঠানো একটি নোটে লিখেছিলেন, গ্রীষ্ফ্মের শেষের দিকে বা শরতের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হতে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,এবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিল পরিশোধে অপারগ হওয়ার আশঙ্কা ২০১১ সাল থেকে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি বিষয়টি নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। রিপাবলিকানরা জানিয়েছেন, তাঁরা শুধু তখনই ঋণের সীমা বাড়ানোর জন্য অগ্রসর হবেন যদি কংগ্রেস আগামী অর্থবছরে ফেডারেল ব্যয় অন্তত ১৩০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস করে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনই ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হয়নি। ট্রেজারি সেক্রেটারি ইয়েলেন অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন, এবার ঋণখেলাপি হলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। মুডিস অ্যানালিটিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেন, এমনটা ঘটলে তা হবে ‘গুরুতর’। কারণ এটি আর্থিক বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অর্থনীতি গুরুতর মন্দার মধ্যে পড়বে।

তবে সরকারি অর্থ প্রদান এবং রাজস্বে অস্থিরতার কারণে সরকারের একটি ঋণখেলাপি হওয়ার সঠিক তারিখ চিহ্নিত করা কঠিন। তবে জুনের আগে এটি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ট্রেজারি সেক্রেটারি ইয়েলেন মনে করছেন। সংকট এড়াতে কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ঋণের সীমা বাড়াতে পারে। দেশটির আইনপ্রণেতারা অতীতে অনেকবার এমনটা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হলে ওই দেশটিতে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বহু ধাক্কা লাগবে। এটা ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে পারে। এতে লাখ লাখ আমেরিকান পরিবার নির্দিষ্ট ফেডারেল সুবিধা, যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি, স্বাস্থ্যসেবা এবং পুষ্টি, ভেটেরান এবং আবাসন সম্পর্কিত অর্থ সময়মতো নাও পেতে পারেন। এতে জাতীয় প্রতিরক্ষার মতো সরকারি কার্যাবলি প্রভাবিত হতে পারে। কারণ এতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেতন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।

এমনটা হলে মার্কিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে নগদ অর্থ কম থাকবে। এই পরিস্থিতিতে একটি মন্দা অনিবার্য হতে পারে। মন্দায় হাজার হাজার চাকরি হারানো এবং উচ্চ বেকারত্বের ঝুঁকি তৈরি হবে। বিনিযয়োগকারীরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড এবং মার্কিন ডলারকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখেন। বন্ডহোল্ডাররা নিশ্চিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থ সুদসহ সময়মতো ফেরত দেবে। কারণ মার্কিন ট্রেজারি ঋণ ঝুঁকিমুক্ত বলে সবাই বিশ্বাস করে থাকে। তবে ঋণসীমা অতিক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বড় সমস্যা নয়। ট্রেজারির বিল পরিশোধের জন্য অস্থায়ী বিকল্প রয়েছে। যেমন সরকারের হাতে থাকা নগদ অর্থ ব্যবহার বা যে কোনো খাত থেকে আসা রাজস্ব প্রয়োজন অনুসারে খরচ করতে পারে।

প্রয়োজনে এটি ‘অসাধারণ ব্যবস্থাও’ প্রয়োগ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট ফেডারেল অবসর এবং অক্ষমতা তহবিলে অর্থ বরাদ্দে স্থগিতাদেশ। পরে সেই তহবিল সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হবে। শেষ পর্যন্ত সব আর্থিক বাধ্যবাধকতা যথাসময়ে পূরণ করার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপের ঘটনা ঘটবে। যেমন, মার্কিন ট্রেজারি বন্ড গ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের অর্থ দিতে অপারগতা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থ সংগ্রহের জন্য বন্ড বিক্রি করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর আগে শুধু একবারই ঋণখেলাপি হয়েছে, সেটা ১৯৭৯ সালে। তবে তা ঘটেছিল পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে। সেই ত্রুটি দ্রুত সংশোধন করা হয়। সে সময় বিনিয়োগকারীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন