নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভেঙে পড়েছে রুশ কূটনীতি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১১:০১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১১:০১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ভেঙে পড়েছে রুশ কূটনীতি

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

রাশিয়ার কূটনীতিকরা একসময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈদেশিক নীতি ও কর্মকৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। সেই ভূমিকায় এখন আর নেই তারা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর কয়েক বছর আগেই কূটনীতিকরা কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেন। ক্রেমলিনের ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে তারা এখন কোণঠাসা। সরকারি বক্তব্য ও সিদ্ধান্তের বাইরে টুঁ শব্দও করতে পারেন না কূটনীতিকরা। বিষয়টিকে পুতিনের অধীনে রাশিয়ার কূটনীতির মৃত্যু বলে মনে করছেন পশ্চিমা দেশে নিযুক্ত দেশটির সাবেক কূটনীতিক এবং ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।

কীভাবে ভেঙে পড়ল রাশিয়ার কূটনীতি– এমন প্রশ্নে তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু ঘটনা। দেশটির কূটনীতিকরা যে ‘রোবটে পরিণত’ হয়েছেন, তা-ই প্রমাণ করে সেসব ঘটনা। ২০২১ সালের অক্টোবরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে ছিলেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তাঁকে নুল্যান্ড কয়েক দশক ধরেই চেনেন শান্ত স্বভাবের আলোচক হিসেবে। কিন্তু ওই বৈঠকে তিনি ছিলেন কঠোর। ওই দিন বৈঠকে রিয়াবকভ কাগজ দেখে দেখে মস্কোর সরকারি অবস্থান পড়ে শোনান। একই সঙ্গে নুল্যান্ডকে কথা বলতেও বাধা দেন। এতে নুল্যান্ড হতবাক হন। এ ঘটনার পর রিয়াবকভ এবং তাঁর এক সহকর্মীকে ‘কাগজপত্রসহ রোবট’ হিসেবে বর্ণনা করেন নুল্যান্ড।

শুধু তাই নয়, বৈঠকের বাইরে রুশ কূটনীতিকরা অকূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করছেন ব্যাপকভাবে। তারা বলেন, ‘আমরা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ওপর থুথু ফেলি।’ এ সময় তারা রাশিয়ার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রেরও বড়াই করেন। এসব ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন। ২০০০ সালে পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশকে ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন কল্পনা করতে পারি না। ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়া সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’

ক্রেমলিনের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার শুরুর দিকে রাশিয়ার কূটনীতিকরা পুতিনের দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। তারা চীন এবং নরওয়ের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ সমাধানে সহায়তা ছাড়াও জর্জিয়ায় বিপ্লবের পর শান্তিপূর্ণ স্থানান্তর নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু পুতিন ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ হয়ে উঠলে পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক জার্মানিতে নির্বাসিত আলেকজান্ডার গাবুয়েভ বলেন, নিজের কর্তৃত্ব বাড়তে থাকলে পুতিন নিশ্চিত হন তাঁর কাছে বিশ্বের গোটা উত্তর অংশ রয়েছে, এখন আর কূটনীতিকদের প্রয়োজন নেই। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে পুতিনের বক্তৃতায় ২০০৭ সালে প্রথম একটি নতুন শীতল যুদ্ধ শুরু হওয়ার সংকেত আসে। পশ্চিমা দেশগুলোকে অভিযুক্ত করে সে সময় তিনি বলেন, বিশ্বে নতুন করে আবার ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করার চেষ্টা করছে পশ্চিমারা। রাশিয়ার কূটনীতিকরাও তাঁর সেই বক্তব্য অনুসরণ করেন এবং এরপর থেকেই তাদের আচরণ পরিবর্তন হতে থাকে।

এদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, ওডেসা অঞ্চলের দানিউব নদীবন্দরে রুশ ড্রোন হামলায় অন্তত দু’জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোটিতে রপ্তানির জন্য গম রাখা ছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর আরও দুটি জাহাজ কৃষ্ণসাগর করিডোর দিয়ে গন্তব্যে গেছে। এদিকে আজ মস্কোতে আবারও পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন