নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে যে যুক্তিতে অভিন্ন আইনের বিরোধিতা করছে মুসলিম ল বোর্ড

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০৭:২৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ভারতে যে যুক্তিতে অভিন্ন আইনের বিরোধিতা করছে মুসলিম ল বোর্ড

ছবির ক্যাপশান : পার্সোনাল ল-তে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে দিল্লির যন্তর মন্তরে মুসলিমদের প্রতিবাদ

সংখ্যাগরিষ্ঠর বেঁধে দেওয়া নৈতিকতার’ মাপকাঠিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না – এই যুক্তি দেখিয়ে ভারতে প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (ইউসিসি) তীব্র বিরোধিতা করল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। ভারতীয় মুসলিম সমাজে সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন এই ল বোর্ড – এবং সে দেশে মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইনের (পার্সোনাল ল) ‘কাস্টডিয়ান’ বা হেফাজতকারী হিসেবেও তারা পরিচিত।

সারা দেশে সব ধর্মের সব নাগরিকের জন্য একই ধরনের দেওয়ানি আইন – যেটাকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা ইউসিসি বলা হয়ে থাকে – তা চালু করার ব্যাপারে জনগণের মতামত জানতে চেয়ে ভারতের ‘ল কমিশন’ এর আগে ১৪ই জুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল।

এর দিনকয়েক পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ্য জনসভা থেকে ইউসিসির জন্য সওয়াল করেন এবং বলেন, একই পরিবারের সদস্যদের জন্য যেমন আলাদা আলাদা নিয়ম হতে পারে না, তেমনি একই দেশের নাগরিকদের জন্যও আলাদা আইন থাকা উচিত নয়।

এরপর প্রস্তাবিত এই ইউসিসির নানা দিক খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন দলের এমপিদের নিয়ে একটি পার্লামেন্টারি প্যানেলও গঠন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই ইউসিসি আনতে একটি বিল পেশ করা হবে।

আইনটিতে কী থাকবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

ইতিমধ্যে দেশের ছোট-বড় প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ইউসিসি নিয়ে তাদের মতামত জানাতে শুরু করেছে। অনেকেই যেমন এই প্রস্তাবে সমর্থন জানাচ্ছেন, তেমনি আবার বহু দল পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা এই পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী।

এই পটভূমিতেই অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড আইন কমিশনের কাছে লিখিত আকারে তাদের মতামত পেশ করে ইউসিসি নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান স্পষ্ট করে দিল।

গতকাল (বুধবার) ল বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকের পর এই মতামেতর খসড়া চূড়ান্ত করা হয় এবং তারপর মোট ১০০ পৃষ্ঠার সেই ‘প্রেজেন্টেশন’ আইন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

‘মুসলিম পরিচয় রক্ষাটা জরুরি’

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র এস কিউ আর ইলিয়াস বিবিসিকে বলেন, “ইউসিসিকে সমর্থন করে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যে কতটা অসার ও ভিত্তিহীন সেটাই আমরা আমাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছি।”

তাদের ওই প্রেজেন্টেশনের মূল কথাটা হল, রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি যে সংবিধান – সেটাই ‘ইউনিফর্ম’ নয়, কারণ ভারতের সংবিধান বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীকে বিশেষ ধরনের বেশ কিছু অধিকার দিয়েছে।

“সমগ্র দেশ যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকে, সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু দেশের সংবিধান-প্রণেতারা এটা করেছিলেন। ফলে নানা ধরনের ‘ট্রিটমেন্ট’, নানা রকম ভাবে ‘অ্যাকোমোডেট’ বা ‘অ্যাডজাস্ট’ করা – এগুলো আমাদের সংবিধানের চরিত্রেই আছে”, বলছিলেন মি ইলিয়াস।

সংবিধানে ভারতের বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকাকে যেমন আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব রীতিনীতি অনুযায়ী আলাদা আইন পেয়েছেন কিংবা নানা ধর্মের লোক নানা অধিকার ভোগ করছেন – এগুলোকেই নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি হিসেবে পেশ করেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।

দ্বিতীয় যে বিষয়টির ওপর তারা জোর দিয়েছেন সেটি হল মুসলিমদের ধর্মীয় ‘আইডেন্টিটি’ বা পরিচয় রক্ষা করা।

ল বোর্ডের প্রেজেন্টশনে বলা হয়েছে. ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন আর সুন্নাহ (ইসলামী আইনসমূহ) থেকেই সরাসরি মুসলিম পার্সোনাল ল উৎসারিত হয়েছে। ফলে এই আইন একজন মুসলিমের ধর্মীয় পরিচয়ের সঙ্গে সংযুক্ত।

এস কিউ আর ইলিয়াস বিবিসিকে আরও জানান, “আমরা বলেছি দেশের সাংবিধানিক কাঠামোতেও যেখানে এই ধর্মীয় পরিচয়টা রক্ষার কথা বলা হয়েছে, তখন ভারতের মুসলিমরা কিছুতেই মেনে নেবেন না যে সেই পরিচয়টা লুপ্ত হোক।”

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড যুক্তি দিচ্ছে, দেশের ‘বৈচিত্র্য’ সঠিকভাবে রক্ষিত হলে তবেই জাতীয় সংহতি, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব – আর দেশের সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা যদি তাদের নিজস্ব পার্সোনাল ল অনুসারে জীবনযাপন করতে পারেন তাহলেই ভারতের সেই বৈচিত্র্য বজায় থাকবে।

ভারতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সমালোচকরা অবশ্য বলে থাকেন, ধর্মীয় যুক্তি দিয়ে তারা ভারতে চিরকাল মুসলিম পার্সোনাল ল-র সংস্কারে বাধা দিয়ে এসেছেন এবং সেই আইনকে কখনোই যুগোপযোগী করে তোলেননি। সুত্র বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন