নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় আর্থিক সহায়তা ছাড়া এসডিজি অর্জিত হবে না বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩ | ০২:০৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ | ০২:১২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বড় আর্থিক সহায়তা ছাড়া এসডিজি অর্জিত হবে না বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সরবরাহের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সফররত জাতিসঙ্ঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহাম্মদের সভাপতিত্বে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আশঙ্কা করছি, অর্থায়নে বড় ধরনের সহায়তা না দিলে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না-ও হতে পারে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘের এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনের আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৩’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে জাতিসঙ্ঘের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের আট বছর পরও এসডিজি অর্জনে অর্থায়ন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা খুব ভালো করেছি, আমরা এসডিজিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছি এবং আমরা এটিকে আমাদের পুরো সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার এসডিজি অর্থায়নের ৮৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবে এবং বাকি ১৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মোমেন বলেন, ২০৩০ সালের নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য আর্থিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির এটাই উপযুক্ত সময়। পররাষ্ট্র সচিব তার বক্তব্যে বলেন, বাহ্যিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে তার অঙ্গীকারে অবিচল রয়েছে এবং এর সকল মূল জাতীয় উন্নয়ন কৌশল এজেন্ডার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, এ রক্ষ্যে আমরা জাতীয় সংসদ, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত, শ্রমিক সংগঠন এবং গণমাধ্যমের অংশীদারদের সাথে নিয়মিত এবং বিস্তৃত আলোচনার মাধ্যমে একটি ‘সামগ্রিক-সমাজ’ পন্থা গ্রহণ করেছি।

অনেক উন্নয়ন সহযোগী রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দারিদ্র্যকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, দারিদ্র্য এসডিজি অর্জনেও বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে কাজ করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের অনেক উন্নয়ন সহযোগী ও প্রতিষ্ঠান রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে মনোযোগী হওয়া উচিত, রাজনীতিতে নয়।

সফররত জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা জে. মোহাম্মদের সঙ্গে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘রোড টু সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সামিট ২০২৩’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পর শনিবার (১ জুলাই) রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জাতিসংঘের উপমহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলাপ হয়নি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, যাদের জনগণের ওপর আস্থা নেই, তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। আমরা জনগণের ওপর আস্থা রাখি। জনগণ যতদিন আমাদের চাইবে, আমরা ততদিন তাদের সেবা করে যাব।

তিনি দেশের অনিষ্ট না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি জনগণকে আহ্বান জানাই, যারা দেশের ধ্বংস চায়, আপনারা তাদের বর্জন করুন। এ দেশের উন্নতি হলে দেশের যে-যেই মতের বা দলের হোক না কেন; তারও উন্নতি হবে। সুতরাং সবাই একসঙ্গে দেশের যাতে অনিষ্ট না হয়, বিদেশ থেকে ডেকে এনে যেন দেশের অনিষ্ট না করা হয়, সেই কাজটিই করেন। তাহলে আপনাদের মঙ্গল, দেশের ও জনগণের মঙ্গল।’

এদিকে শনিবার বিকেলে জাতিসংঘের উপমহাসচিব ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনা জে. মোহাম্মদ দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী আমিনা চীন ও ভারত সফরের মাঝে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন। এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। বেইজিং থেকে ঢাকায় এসে তিনি শনিবার বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপরই তিনি সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এসডিজিবিষয়ক সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশের এসডিজির অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক শামীমা আক্তার, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন।

সেমিনারে আমিনা মোহাম্মদ জানান, তার বাংলাদেশ সফরের মূল ফোকাস টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে এসডিজি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ ধারণার প্রতিফলন ঘটবে।

উপমহাসচিব আমিনা এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি বিনিময় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রায় প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। এমডিজি ছিল সামাজিক এজেন্ডা। এসডিজি হচ্ছে টেকসই এজেন্ডা।

বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসডিজি ও জলবায়ুর পরিবর্তন যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা ও এসডিজি বাস্তবায়নে নারী, তরুণ, নাগরিক সমাজসহ সব অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত করে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। একইসঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী জি-২০ দেশগুলোকে তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

সেমিনার শেষে শনিবার রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন। রোববার (২ জুলাই) সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে তিনি তেজগাঁওয়ে পাট বহুমুখীকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। এরপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মোংলার উদ্দেশে হেলিকপ্টারযোগে রওনা দেবেন। মোংলায় উলুবুনিয়া ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ঘুরে দেখবেন। জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি জলবায়ু ঝুঁকির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কমিউনিটি ক্লিনিকও ঘুরে দেখবেন। সূত্র : বাসস

শেয়ার করুন