নিউইয়র্ক     সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেডারেল ফৌজদারি মামলায় আদালতে ৩৭ অভিযোগেনিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ট্রাম্প

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩ | ০২:২৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ | ০২:২৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ফেডারেল ফৌজদারি মামলায় আদালতে ৩৭ অভিযোগেনিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফেডারেল ফৌজদারি মামলায় নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) আদালতে হাজির হন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষেও তিনি নিজের কাছে বেআইনিভাবে জাতীয়-নিরাপত্তার নথিপত্রগুলো রেখে দিয়েছেন। পাশাপাশি সেসব নথি পুনরুদ্ধার করতে যাওয়া কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা বলে তদন্তে বাধা দেয়ার চেষ্টাও করেছেন ট্রাম্প। তবে মিয়ামির আদালতে এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আদালতে ট্রাম্প নীল স্যুট এবং লাল টাই পরে এসেছিলেন। আদালত কক্ষে প্রবেশ করে তিনি একটি চেয়ারে হেলান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বসে ছিলেন। ৪৭ মিনিট ধরে চলা ওই শুনানির সময় তিনি একটি কথাও বলেননি। শুনানি শেষে ট্রাম্পকে কোনো শর্ত বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই আদালত ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেন ম্যাজিষ্ট্রেট বিচারক গুডম্যান রায়।

ট্রাম্পের সহযোগী ওয়াল্ট নাউটা, যিনি এই মামলায় অভিযুক্ত। তিনিও ট্রাম্পের সঙ্গে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। আদালত ত্যাগের সময় বাইরে ট্রাম্পের সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছিল ‘আমরা ট্রাম্পকে ভালোবাসি’। ট্রাম্পের বিচার উপলক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণ নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে এটি ছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার আদালত সফর। ট্রাম্পই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে ফেডারেল অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে নিউইয়র্কে আরেকটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

তবে উভয় অভিযোগেই ট্রাম্প বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ‘হাস্যকর ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি কোনো অন্যায় করেননি বলে দাবি করেছেন। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরাতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে ফেডারেল মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৩ জুন) আদালত থেকে বের হয়েই একটি কিউবান রেস্টুরেন্টে যান ট্রাম্প। সেখানে তার সমর্থকরা অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে ট্রাম্প সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারচুপি, দুর্নীতি এবং পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমন একটি সরকার পেয়েছি যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর আগে নিউ জার্সির বেডমিনস্টারে নিজের গলফ ক্লাব থেকে বিমানযোগে মিয়ামিতে যান ট্রাম্প।

গত বছরের শেষ দিকে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও লড়তে চলেছেন তিনি। এরপরই একের পর এক আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে থাকেন এই রিপাবলিকান নেতা। গত এপ্রিলেই পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত মামলায় ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট যাকে অভিযুক্ত করা হয়। এবার তার বিরুদ্ধে ফেডারাল অপরাধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ড গড়লেন ট্রাম্প।

যদিও মিয়ামিতে আদালতে হাজিরা দেয়ার বিষয়টিকে কার্যত নিজের প্রচারের ময়দান বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় একেবারে সাহসী মুখ তুলে ধরার চেষ্টা করেন ট্রাম্প। তার বার্তা একেবারে স্পষ্ট। ট্রাম্প বলতে চান যে, তিনিতো কোনো দোষ করেননিই, উল্টো তাকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিন, মিয়ামির আদালতের বাইরে ট্রাম্প সমর্থকদের জমায়েত ঘটে। তারা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগান খচিত টুপি পরে ‘মিয়ামি ফর ট্রাম্প’ বলে স্লোগান দেন। এসময় এক ব্যাক্তি ‘ইউএসএ! ইউএসএ!’ বলে চিৎকার করছিলেন। মিয়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ গণমাধ্যমকে জানান, এখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হয়নি।

এদিকে জরিপ সংস্থা ইপসস এবং বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নতুন জরিপ থেকে দেখা গেছে, বেশিরভাগ রিপাবলিকান সমর্থক মনে করেন যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাশাপাশি ২০২৪ সালের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থীদের বিপরীতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। জরিপ অনুসারে ৮১ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থক মনে করেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই এই মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, ৪৩ শতাংশ স্ব-স্বীকৃত রিপাবলিকান সমর্থক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের পছন্দের প্রার্থী বলে বেছে নিয়েছেন। বিপরীতে ২২ শতাংশ সমর্থক বেছে নিয়েছেন রন ডিস্যান্টিসকে।

মিয়ামি থেকে বিমানে চেপে সরাসরি নিউ জার্সিতে নিজের গলফ ক্লাবে চলে যান ট্রাম্প। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, আমি ক্ষমতায় এলে সত্যিকারের একজন স্পেশাল প্রসিকিউটরকে নিয়োগ করব। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাইডেনের পুরো অপরাধী গোষ্ঠীকে নিয়ে তদন্ত করবেন। তারপরই ট্রাম্প সমর্থকরা বাইডেনকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলে ‘লক হিম আপ’ স্লোগান দিতে থাকে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা এবং নির্বাচনকে বাতিল করার প্রচেষ্টার অভিযোগে একটি ফৌজদারি তদন্ত চালাচ্ছে। এই তদন্তের প্রধান টার্গেট ট্রাম্পের কট্টোর সমর্থকরা। তারাই সেদিনের ওই তাণ্ডব চালিয়েছিল। তবে এই তদন্ত চলছে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে। এটিকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুলিশ তদন্ত। ধারণা করা হচ্ছে, ওই তদন্তেও ফেঁসে যেতে পারেন ট্রাম্প।

এখন প্রশ্ন হলো, এই অভিযোগে যদি ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে কি তিনি আর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? ট্রাম্প ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান। তবে এ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেননি। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল সেন্টারের অধ্যাপক ডেভিড সুপার বিবিসি-কে জানিয়েছেন, ”তিনি বহবার অভিযুক্ত হতে পারেন। তার জন্য তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়া আটকাবে না। যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাও তিনি লড়তে পারবেন।” আবার কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, দোযী প্রমাণিত হলে তার পক্ষে প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব হবে না।

ট্রাম্প বলেছেন, ”আমি কখনো ভাবতে পারিনি, অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের এরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে। অ্যামেরিকার পক্ষে কালো দিন। আমরা অধঃপাতে যাচ্ছি। আমার সবাই মিলে অ্যামেরিকাকে আবার মহান করব।” গতবছর ট্রাম্পের ফ্লোরিডা রিসর্ট থেকে ১১ হাজার নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর মধ্যে একশ নথিতে গোপনীয় লেখা ছিল। গতসপ্তাহে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, তদন্তকারীরা ট্রাম্পের অডিও রেকর্ডিং পেয়েছেন, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরেও গোপনীয় নথি নিজের কাছে রেখেছিলেন।

সাথী/পরিচয়

শেয়ার করুন