নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর

কৌশলী বিএনপি, মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৫৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কৌশলী বিএনপি, মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

২৮ অক্টোবর ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

২৮ অক্টোবর ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একই দিনে পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তাই বেশ তৎপর অবস্থানে আছে পুলিশ প্রশাসন। বিএনপি এরইমধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সমাবেশ করার লিখিত অনুমতি চেয়েছে পুলিশের কাছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে তারা নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পায়নি। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছেন তারা।

এদিকে, সরকার মনে করছে বিএনপি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর পরই ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি শুরু করতে পারে। তাদের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিতে পারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও সেই আশঙ্কার কথা বলেছেন। সেজন্য নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে বলেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের ধরপাকড় এড়িয়ে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। যাদের ঢাকায় অবস্থানের সুযোগ নেই তাদের ঢাকার আশপাশের এলাকায় এসে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

তারা সমাবেশের আগের দিন অথবা সমাবেশের দিন সুযোগ মতো ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন। নেতারা বলছেন, ওই সমাবেশের মধ্য দিয়েই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। তাই তারা সর্বশক্তি দিয়েই ঢাকায় বড় আকারের জনসমাগম নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল জানান, এখন আর আলাদা করে নির্দেশনা দিতে হয় না। সব সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই যার যার মতো সমাবেশে হাজির হবেন।

গত ১৮ তারিখের সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে নেতাকর্মীদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কিন্তু তারপরও তারা ঢাকা এসেছেন। সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। আর এবার তো মহাসমাবেশ। তাই সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঢাকা আসবেন। অনেকে এরইমধ্যে আসতে শুরু করেছেন।

জানা গেছে, পুলিশি গ্রেপ্তারের মুখে বিএনপি মনে করছে সমাবেশের দুই-একদিন আগে থেকেই ঢাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। কৌশলে বাস ও লঞ্চ চলাচলে বাধা দেয়া হতে পারে। পথে পথে নেতাকর্মীদের আটক করা হতে পারে। তাই তাদের ২৫ তারিখের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। আর তাদের যেকোনো কৌশলে গ্রেপ্তার এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এমনকি, ঢাকায় আসার পর হোটেলে না থেকে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের বাসায় থাকারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মেসে উঠতেও নিষেধ করা হয়েছে। আর কোনো বাস বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে সবাই একসঙ্গে না এসে যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ বা ট্রেনে সাধারণ যাত্রীর মতো আসতে বলা হয়েছে।

বাড়তি কৌশল হিসেবে নেতাকর্মীদের স্মার্ট ফোনের পরিবর্তে বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে। আর স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও ফোনের মধ্যে এমন কিছু রাখতে না করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় তিনি বিএনপির কর্মী।

বিএনপির কৌশল হলো, পুলিশি বাধা ও তল্লাশি ফাঁকি দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী যাতে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসতে পারেন। রাস্তাঘাট বা আসার পথে কোনো শোডাউন করে বিপদ ডেকে না আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সমাবেশের আগের দিন, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে পারেন। বিএনপি মনে করে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এবার পুলিশ সমাবেশ স্থল বা তার আশপাশে প্রকাশ্যে কোনো মারমুখী ভূমিকায় যেতে পারবে না। তবে পুলিশ আগেই ঢাকাসহ সারাদেশে একটা নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে৷ আর সেখানেই নেতাকর্মীদের কৌশলী হতে বলা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবিবার (২২ অক্টোবর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলা হয়নি। আমরা বলেছি, ২৮ তারিখে কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষা করবেন। আমরা ২৮ তারিখে এমন কোনো কর্মসূচি দেব না যে ঢাকায় বসতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, জোর গলায় বলতে পারি এখন পর্যন্ত কোথাও আমরা অশান্তির সৃষ্টি করিনি। যা কিছু করছে সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি পুলিশকে বিএনপির আন্দোলনে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২৮ তারিখ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ হবে। আমরা আশা করব, সারাদেশ থেকে শান্তিপ্রিয় মানুষ আসবে। তাদের দাবি সোচ্চার কণ্ঠে জানিয়ে যাবে৷ সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

এদিকে, পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে। ওইদিন তারাও ব্যাপক লোকের সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সমাবেশে লোক আনা তাদের মূল বিষয় নয়, তারা চাইছেন ওই দিন ঢাকার সড়ক- অলিগলি ও পাড়া মহল্লা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, নগরীতে পুলিশ ধারাবহিকভাবে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। তাদের নজর এখন হোটেল ও মেসগুলোর দিকে। তারা স্থানীয় পর্যায় থেকে তথ্য নিয়েও কাজ করছে। পুলিশের টার্গেট হলো সমাবেশের আগে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে যান ও জন চলাচল সীমিত করে ফেলা। আর পরিবহণ ও লঞ্চ মালিকেরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেবেন কী না তা এখনো জানা যায়নি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এস কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করব কেন? বিএনপি নেতারাই বলেছেন, তারা ২৮ তারিখ সমাবেশের পর অবস্থান নেবে। সমাবেশ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ কিন্তু অবরোধ, অবস্থানের নামে যদি রাস্তা ঘাট দখল করে, সাধারণের চলাচল বিঘ্নিত করা হয়, তাতো করতে দেয়া হবে না। সাধারণ মানুষ তাদের পিটিয়ে উঠিয়ে দেবে। ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন