নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনি লড়াইয়ে ট্রাম্পের পাশে দল ও সমর্থকরা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আইনি লড়াইয়ে ট্রাম্পের পাশে দল ও সমর্থকরা

লিনয় অঙ্গরাজ্যের মেন্ডনে এক সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছবি : নিউইয়র্ক টাইমস

সপ্তাহ দুয়েক আগে আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় সম্ভাব্য গ্রেফতার আটকাতে সমর্থকদের বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ প্লাটফর্মে। রিপাবলিকান এ নেতার আগের সব মন্তব্যের ভিত্তি ছিল তার ব্যক্তিগত আশঙ্কা। সপ্তাহ ঘুরতেই সেই আশঙ্কা সত্য হয়েছে। এখন দেখার পালা তার সমর্থকরা বিষয়টিতে কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকানদের থেকে শক্ত সমর্থন পেতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। কংগ্রেস ও সিনেট সদস্যরা সরাসরি বিচার ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ রিপাবলিকান মার্কিন কংগ্রেসে মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযুক্তকরণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ‘‌বিচার ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে অভিহিত করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বেশ সমালোচনা করেন রিপাবলিকানরা। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে ট্রাম্পের মিত্ররা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যা বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক নির্বাচনী জালিয়াতির মিথ্যা দাবিগুলোর প্রতিধ্বনি করেছে। পাশাপাশি এসব বক্তব্যে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল হিল হামলার ঘটনাকেও ন্যায় হিসেবে আখ্যা দেয়ার পরোক্ষ চেষ্টা রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রিপাবলিকানদের বর্তমান বক্তব্য অপরাধসংক্রান্ত বিচার ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতাকে ক্ষুণ্ণ করে। এসব বক্তব্য আদালতের প্রতি জনসাধারণের আস্থা কমাতে পারে। এ প্রসঙ্গে ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের পক্ষে ভোটদানকারী রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এক টুইটে বলেন, ‘ট্রাম্পের অভিযুক্তকরণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ। বিরোধী দলকে নির্যাতনের জন্য আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এটি তাদের চূড়ান্ত পদক্ষেপ। স্বৈরতান্ত্রিকরা সাধারণত এ রকমটাই করে। যুক্তরাষ্ট্রে এ রকমটা হওয়া উচিত নয়।’

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প আগামীকাল নিউইয়র্কে একটি শুনানিতে হাজির হবেন। তিনি কোন অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন সে বিষয়টি এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে ‘ফার্স্ট ডিগ্রি’ ব্যবসায়িক তথ্য জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। মার্কিন আইন অনুযায়ী এটি একটি গুরুতর অপরাধ।

আদালতের সাম্প্রতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সমর্থকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। ট্রাম্পের অনেক সমর্থক বলছেন, আইনি লড়াই থেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন ট্রাম্প। এমনকি যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তবু ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পই জয়ী হবেন। ফ্লোরিডায় এক শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া পাম বিচের বাসিন্দা ডিনা বলেন, ‘আমি মনে করি সে আবার আমাদের প্রেসিডেন্ট হবে। আমরা আরো অনেক লোককে তাকে সমর্থন করতে দেখব। আমরা তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগের খবর অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এ-সম্পর্কিত তথ্য নিয়েছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং মিডিয়া বিবিসি। ট্রাম্প-সম্পর্কিত কনটেন্ট অনুসন্ধানে মোটা দাগে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, ট্রাম্পের সমর্থকরা অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। ক্ষমতাসীনদের চোর বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটরা কীভাবে আইনি অস্ত্র ব্যবহার করেছেন সেই চর্চাই বেশি হচ্ছে। অনেকেই এ মামলাকে আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে জো বাইডেনের একটি কূটকৌশল হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে বলছেন, এখনই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে বসানো হোক।

টেলিগ্রামের মতো সাইটগুলোয় ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থকদের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। সেখানে একটা ভিন্ন পরিবেশও লক্ষ করা গেছে। সরকারের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন অনেকে। ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে এবং ট্রাম্পই প্রকৃত বিজয়ী বলেও দাবিওকরেন অনেকে। তারা বলেন, ‘ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হলে আমরা এ ভুয়া সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াব কিনা সেটি বিবেচনা করব।’ আরো আগ্রাসী পোস্টও আছে, যেগুলোয় দেখা যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির কথা। যদিও এমন কোনো পরিস্থিতি এখনো দৃশ্যমান হয়নি। রাস্তায় নামার পরিবর্তে অনেকেই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো ডেমোক্র্যাটদের জন্যও একটি বড় আলোচনার বিষয়। কারাগারের জামাকাপড় পরে ট্রাম্পের জেলখানায় থাকার প্রতীকী দৃশ্য ভেসে বেড়াচ্ছে এসব সমর্থকের পোস্টগুলোয়। ট্রাম্পের আসন্ন গ্রেফতার উদযাপন করছেন তারা। অনেকে মন্তব্য করেছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অবশ্য বেশ কয়েকটি পোস্ট ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক কিনা এবং সঠিক বিচার হচ্ছে কিনা। রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পকে সমর্থন করছে। এমন কিছু পোস্ট আছে যেখানে অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণ হবে বলে জানা গেছে। যদি এমনটা হয় তবে ট্রাম্পের সমর্থকের সংখ্যা বাড়ার যে আশঙ্কা ডেমোক্র্যাটরা করছিলেন সেটি সত্যিও হতে পারে।

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন