নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের নির্বাচিত হলে ট্রাম্প যেভাবে আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠবেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ফের নির্বাচিত হলে ট্রাম্প যেভাবে আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠবেন

জ্যান ওয়ার্নার মুলার: ভবিষ্যতে কে কী আচরণ করবে, তা নির্ভর করে মানুষের অতীত আচরণের ওপর। ট্রাম্প রিপাবলিকানদের মনোনয়ন পাচ্ছেন এবং দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসছেন, এমন বিশ্বাস আছে অনেকেরই। তাঁরা বলতে চান, ট্রাম্প অতীতে কী করেছেন, সেটা মনে রাখাই যথেষ্ট। মানে ট্রাম্প যেহেতু প্রথম দফাতেই ফ্যাসিস্ট হয়ে যাননি, দ্বিতীয় দফাতেও হবেন না। বরং তিনি আগের মতোই ভাঁড়ামি করবেন।

কিন্তু এত গা ছাড়া মনোভাব যাঁদের, তাঁরা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন। সেটা হলো, আজকে যাঁরা ক্ষমতায় এসে একনায়কতন্ত্রের সূচনা করছেন, দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করে তাঁরা আরও কট্টর একনায়ক হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্পের বেলায়ও এর ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ কম। তিনি গণতন্ত্রের গায়ে আঁচড় লাগতে দেবেন না, বিষয়টা এমন নয়।

ট্রাম্পের সঙ্গে হাঙ্গেরির চরম ডানপন্থী ভিক্টর ওরবান অথবা পোল্যান্ডের ইয়ারোস ক্যাজিস্কির অমিল হলো তাঁরা খুব সতর্কভাবে তাঁদের একনায়কোচিত পরিকল্পনা লুকিয়ে রাখেন। অন্যদিকে ট্রাম্প আগেভাগেই তাঁর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। যদি নির্বাচিত হন, তাহলে কড়ায়-গন্ডায় উশুল করবেন সব।

ওরবান বা ক্যাজিস্কি এ দুজনের মধ্যে মিল হলো, তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনে তাঁদের ইচ্ছা করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁরা বিচার বিভাগ থেকে সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত সবাইকে দুষেছেন। যখন তাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উদারপন্থীদের সঙ্গে ঝগড়া করে রাজনৈতিক পুঁজি শেষ করবেন না। বরং ধীরে ধীরে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল করবেন।

এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুরুতেই আছে বিচার বিভাগ ও প্রশাসন। কারণ, একবার যদি আপনি বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে আপনি সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী—সবাইকে হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন। এরপর ইচ্ছেমতো উদারপন্থীদের ধোলাই করতে পারবেন।

ওরবানদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্প কিছু শিখেছেন কি না, তা নিয়ে আমরা বিতর্ক করতে পারি। তবে বিচক্ষণ বিশ্লেষকেরা আগেই বলেছেন, ট্রাম্প বাহিনী তাঁর অনুগতদের দিয়ে অন্তত ৫০ হাজার আমলাকে সরাবেন, তারপর বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নেবেন।

কর্তৃত্বপরায়ণ জনতুষ্টিবাদী সরকারের প্রথম কাজ হলো দিনদুপুরে প্রশাসনকে ছিনতাই করা এবং মানুষকে এই বলে ধোঁকা দেওয়া যে তারাই কেবল প্রকৃত মানুষ (৬ জানুয়ারি ট্রাম্প যেমন তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন)। তাহলে রাষ্ট্র কাদের জন্য? অবশ্যই জনগণের জন্য। তাই জনতুষ্টিবাদীরা যখন রাষ্ট্রকে দখল করে, তখন তাঁরা বলেন, রাষ্ট্র এখন জনগণের দখলে। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা ভাবুন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ওয়াশিংটনের ক্ষমতা আপনাদের হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছি।’ সাধারণ মানুষ সেই ক্ষমতা ফিরে পাননি। কারণ, তাঁর ভাষায় ‘ডিপ স্টেট’ তখন সক্রিয় ছিল। এবার আর ট্রাম্প সে ভুল করতে চান না ।

ট্রাম্প প্রায় প্রতিটি বক্তৃতায় বলেছেন, তিনি কমিউনিস্ট, মার্ক্সিস্ট, ফ্যাসিস্ট, উগ্র বামপন্থী গুন্ডাদের মূলোৎপাটন করবেন। কারণ, তাঁরা দেশের খেয়ে, দেশের পরে পোকার মতো বেঁচে থাকেন। তাঁরা মিথ্যা বলেন, চুরি করেন, নির্বাচনে দুই নম্বরি করেন। আইনগত বা বেআইনিভাবে আমেরিকা ও আমেরিকাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেন।

ট্রাম্পের কোনো লুকোছাপা নেই। ট্রাম্প বলেছেন, ক্ষমতায় এলে এবার হয় তিনি আমেরিকার ডিপ স্টেট ধ্বংস করবেন অথবা ডিপ স্টেট তাঁকে ধ্বংস করবে। ট্রাম্প যদি জেতেন, তাহলে তিনি বলবেন, প্রকৃত জনগণ (যাঁরা তাঁকে ভোট দেন, কেবল তাঁদেরই তিনি ‘প্রকৃত জনগণ’ বলে বিবেচনা করেন) তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন প্রতিশোধ ও ধ্বংসের জন্য। জ্যান ওয়ার্নার মুলার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

শেয়ার করুন