নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য কতটা ভয়ের

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য কতটা ভয়ের

আমরা মানুষের সব কাজকে কি স্বয়ংক্রিয় করে ফেলব ? আমরা কি এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করব, যা আমাদের ছাড়িয়ে যাবে বা আমাদের চেয়েও উন্নত হবে? আমরা কি আমাদের সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকি নেব? গত মাসে ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউট নামের একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) একটি খোলা চিঠিতে এসব প্রশ্ন তোলা হয়।

বেসরকারি সংস্থার চিঠিতে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) উন্নয়ন ছয় মাস বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়। এতে ইলন মাস্কের মতো বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা স্বাক্ষর করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি জনমনে কতটা উদ্বেগ তৈরি করেছে, তার সবচেয়ে বিশিষ্ট উদাহরণ এটি।

উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, নতুন লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের (এলএলএমএস) দ্রুত উন্নয়ন। এই এলএলএমএস মূলত চ্যাটজিপিটির মূল ইঞ্জিন। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি ইতিমধ্যে প্রযুক্তি–বিশ্বে সাড়া ফেলেছে। এটির অপ্রত্যাশিত প্রতিভা ইতিমধ্যে এর নির্মাতাকেও বিস্মিত করেছে। চ্যাটজিপিটির সক্ষমতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধাঁধার সমাধান, কম্পিউটার কোড লেখা থেকে শুরু করে ফিল্ম শনাক্ত করাসহ অনেক কিছুই।

চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহৃত ভাষার মডেলগুলো কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে রূপান্তরিত করে। এআই প্রযুক্তি উন্নয়নের সমর্থকদের যুক্তি—এ প্রযুক্তি নতুন ওষুধ তৈরি করে বড় সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। নতুন নতুন উপাদান তৈরি করছে, যাতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে লড়তে পারি। জটিল ফিউশন শক্তির সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে। তবে ভিন্নমত পোষণকারী মানুষেরও অভাব নেই। তাঁদের মতে, এআই নির্মাতাদের ঝুঁকি বোঝার সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এআইয়ের ক্ষমতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মারাত্মক ঝুঁকির আশঙ্কাও দেখছেন তাঁরা।

এআই ঘিরে যে উত্তেজনা ও আশঙ্কা ছড়িয়েছে, তার কারণ এর সুযোগ ও ঝুঁকির বিষয়টি এখন বিবেচনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গবেষকেরা বলছেন, অন্যান্য শিল্প খাত ও অতীতে প্রযুক্তি রূপান্তরের সময় থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও সক্ষম করতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে? কতটা ভয় পেতে হবে? সরকারকে কী করতে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখতে হবে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলএলএমএসের ভবিষ্যৎ গতিপথ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এক দশক আগেই আধুনিক এআই সিস্টেমের ঢেউ শুরু হয়েছিল। ওই সময় ছবি শনাক্ত বা বার্তা অনুবাদ করতে পারত এটি। কিন্তু এখন এআই আরও উন্নত হয়েছে। একে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। অনলাইনের বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আরও উন্নত হয়ে উঠতে পারে এই সিস্টেম। গত বছরের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এর সক্ষমতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে মানুষের ধারণা জন্মেছে। চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই ১০ লাখের বেশি মানুষ এটি ব্যবহার করেন। দুই মাসে ১০ কোটি ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করেন। স্কুলের রচনা লেখা থেকে শুরু করে বিয়ের ইচ্ছাপত্রেও এটি ব্যবহৃত হতে শুর করেছে। চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তার কারণে মাইক্রোসফট তাদের বিং সার্চ ইঞ্জিনেও এটি যুক্ত করে। মাইক্রোসফটের দেখাদেখি গুগলও এ পথে হাঁটতে শুরু করেছে।

মানুষের বিলুপ্তির কারণ হবে এআই?

যন্ত্র মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে—এ আশঙ্কা শতাব্দীপ্রাচীন। এখন পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। যন্ত্র কিছু কাজ করতে পারে। তবে সব কাজ পারে না। তাই যন্ত্র যেসব কাজ পারে না, সে ক্ষেত্রে কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি সেই চিত্র আলাদা হবে? কিছু চাকরির ক্ষেত্র হয়তো বন্ধ হবে। তবে এখন পর্যন্ত তার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। আগের অনেক প্রযুক্তি অদক্ষ কাজের কিছু ক্ষেত্র বদলেছে। কিন্তু এলএলএমএস এখন কিছু দক্ষ কর্মীদের কাজ কেড়ে নিতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে কোনো নথির সারমর্ম বের করা ও কোড লেখা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকি হবে কি না, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এখানে বিভক্ত মতামত দিচ্ছেন। গত বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের মধ্যে চালানো এক জরিপ চালানো হয়। তাতে ৪৮ শতাংশ গবেষক মত দেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খুব খারাপ প্রভাব ১০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে। তবে ২৫ শতাংশ গবেষক মনে করেন, মানব অস্তিত্বের জন্য এআই ঝুঁকি হতে পারে—এমন হার শূন্য।

অন্যান্য গবেষক মনে করেন, ঝুঁকির হার ৫ শতাংশ। তবে আশঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে, উন্নত এআই সিস্টেমে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। যেমন বিষাক্ত কোনো কিছু বা ভাইরাস ছড়ানো বা মানুষকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করার মতো পথ বেছে নিতে পারে। গবেষকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতের এআইয়ের নিজের উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এসব উদ্দেশ্য এর নির্মাতাদের চেয়ে পৃথক কিছু হয়ে উঠতে পারে। এসব আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ধরনের উদ্দেশ্য সাধন করতে হলে বর্তমান প্রযুক্তি থেকে অনেক উন্নত হতে হবে এআইকে। এ থেকেই এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে।

এখন এআই পক্ষপাত, গোপনীয়তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ আরও বাড়বে। আরও সমস্যা সৃষ্টি হবে। মূল বিষয় হলো, ঝুঁকি মূল্যায়ন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিশ্রুতির ভারসাম্য বজায় রাখা ও মানিয়ে নিতে প্রস্তুত হওয়া।

এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদ্ধতি নিচ্ছে। যুক্তরাজ্য যেমন ‘লাইট টাচ’ নামের নীতি গ্রহণ করছে। এটি কোনো কঠোর নীতি নয়। তাদের এ নীতিমালার আওতায় বর্তমান আইনকানুন দিয়েই এআই নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এতে এ ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ বাড়বে এবং তারা এআই ক্ষেত্রের পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যুক্তরাজ্যের মতোই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে কঠোর নীতির পথে হাঁটছে। এআইয়ের ঝুঁকি বিবেচনায় তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন আইন করার কথা ভাবছে। – দ্য ইকোনমিস্ট
সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন