এআই প্রযুক্তির উত্থান বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ চাকরির জায়গা দখল করার ভীতি তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চলতি সপ্তাহে রিপোর্ট করেছে যে, সারা বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ চাকরি এআইয়ের উত্থানের ফলে প্রভাবিত হতে পারে।
বিল গেটস প্রথম থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে এসেছেন। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় এই ধনকুবের এবার মনে করছেন যে, প্রযুক্তিটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সবার জীবনেই বেশ পরিবর্তন আনবে।
অন্যদিকে এআই প্রযুক্তির উত্থান বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ চাকরির জায়গা দখল করার ভীতি তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চলতি সপ্তাহে রিপোর্ট করেছে যে, সারা বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ চাকরি এআইয়ের উত্থানের ফলে প্রভাবিত হতে পারে।
তবে গেটস অবশ্য খানিকটা ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবেই প্রতিটি নতুন প্রযুক্তির সাথে সাথে মানুষের মনে সেটিকে নিয়ে ভয় কাজ করে। কিন্তু তারপরেই ঐ প্রযুক্তি ঘিরে নতুন সুযোগ আসে।
এ সম্পর্কে গেটস বলেন, “১৯০০ সালে যখন আমাদের কৃষি উৎপাদনশীলতা ছিল, লোকেরা তখন বলেছিল ‘আরে, কী হতে যাচ্ছে?’ আসলে, অনেক নতুন জিনিস, অনেক নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। যখন সবাই খামারে কাজ করত আমরা এখন তার চেয়ে অনেক ভালো আছি। এটা এমনই হবে।”
গতকাল (মঙ্গলবার) সিএনএন’এর কাছে একটি সাক্ষাত্কার দেন গেটস। সেখানে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এআই প্রত্যেকের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে। উদাহরণস্বরূপ, ডাক্তারদের কাগজপত্রে লেখালেখিতে সাহায্য করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। কেননা এ কাজটি সাধারণত তারা পছন্দ করে না। আর সেটিকেই আমরা এআইয়ের সাহায্যে কাজে লাগাতে পারি।”
এআইয়ের উৎকর্ষ সাধনে যে বেশি পরিমাণে নতুন হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন নেই, সেটিও উল্লেখ করেন গেটস। কেননা বর্তমানে বিদ্যমান ফোন বা পিসিতে ইতিমধ্যেই ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
গেটস আরও বলেন, “ওপেনএআই-এর চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির উন্নতিগুলি ছিল ‘নাটকীয়’। কারণ এটি প্রকৃতপক্ষেই পড়তে ও লিখতে পারে। সুতরাং এটি একজন হোয়াইট কলার কর্মীর জন্য অবশ্যই একজন শিক্ষক হতে, স্বাস্থ্য পরামর্শ দিতে, কোড লিখতে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষা বা চিকিৎসা খাতে এই প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ‘চমৎকার’।”
ওপেনএআই-এর সাথে মাইক্রোসফটের বিলিয়ন ডলারের অংশীদারিত্ব রয়েছে। আর গেটস এ প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডারদের একজন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে গেটস বলেন, “গেটস ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য হল দরিদ্র দেশগুলির লোকেদের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টি ধনী দেশগুলির মতোই দ্রুত নিশ্চিত করা। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমের তুলনায় আফ্রিকাতে চিকিৎসক ও শিক্ষকের ঘাটতি অনেক বেশি।”
বর্তমানে গেটসের সম্পদের পরিমাণ ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, তিনি বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তবে তিনি সম্ভবত এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতেন যদি তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করে না দিতেন। এক্ষেত্রে নিজের সম্পদের হারানোর ভয় করে না তিনি।
নিজের জনহিতকর কাজ সম্পর্কে গেটস বলেন, “আমার নিজের খরচের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ আমার কাছে আছে। আমি নিজেকে ধনীর তালিকার নিচে নামিয়ে আনছি। যখন আমি সম্পূর্ণভাবে তলানিতে চলে যাব তখন আমি গর্বিত হব।”
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী, মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস উভয়েই নিজেদের সম্পদের সিংহভাগ ২০ বছর আগে একসাথে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্যান্য জনহিতকর কাজের সাথেও তারা যুক্ত হয়েছেন।
২০২২ সালে গেটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০২৬ সালের মধ্যে বার্ষিক ৯ বিলিয়ন ডলার করে অর্থছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ এই কাজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গেটস আশা প্রকাশ করেন যে, সংস্থাগুলো ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারবে৷
গেটস ছাড়াও ওয়ারেন বাফেটের মতো অংশীদাররা তার ফাউন্ডেশনে সবমিলিয়ে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার হারে অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে গেটস আশা করেন যে, প্রায় ২০ বছরের মধ্যে তিনি তার সমস্ত অর্থ প্রদান করবেন। সিএনএন