নিউইয়র্ক     বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাকি দিনগুলো পরিবারের সঙ্গেই থাকবেন জিমি কার্টার

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:১৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:১৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বাকি দিনগুলো পরিবারের সঙ্গেই থাকবেন জিমি কার্টার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার অসুস্থ। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কয়দিন বেঁচে থাকবেন এ সময়ে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসা নেবেন। জর্জিয়াতে নিজের বাড়িতেই হাসপাতালের চিকিৎসা নেবেন। শনিবার কার্টার সেন্টার এক ঘোষণায় একথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, জীবনের বাকিটা সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে কি কারণে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, জিমি কার্টারের বয়স এখন ৯৮ বছর। তিনি সম্প্রতি মেলানোমা নামের সবচেয়ে মারাত্মক ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত। এতে দেহের কোষগুলো মেলানিন উৎপাদন করে। এটা একরকম রঞ্জক পদার্থ, যা ত্বকের রঙ নষ্ট করে দেয়।

এই সমস্যা শরীরের উপরিভাবে যেমন, তেমনি ভিতরেও বিভিন্ন অঙ্গে দেখা দিতে পারে। জিমি কার্টারের লিভার এবং ব্রেনে ছড়িয়ে পড়েছে এই ক্যান্সার। এতে কিছুদিন ধরে তিনি মারাত্মক অসুস্থ। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান জীবিত প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এক দফা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তিনি পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। পরের নির্বাচনে রিপাবলিকান রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হন ডেমোক্রেট জিমি কার্টার।

শনিবার কার্টার সেন্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, পরিবার এবং মেডিকেল টিমের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন আছে। এ সময়ে প্রাইভেসি রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছে কার্টার পরিবার। জিমি কার্টারের নাতি জেসন কার্টার জর্জিয়ার সাবেক সিনেটর। তিনি টুইটারে বলেছেন, এরই মধ্যে গ্রান্ডপ্যারেন্টসদের দেখে এসেছেন। তারা শান্তিতে আছেন। বাসায় পূর্ণ ভালবাসায় আছেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ৭৫তম বিয়ে বার্ষিকী উদযাপন করেন জিমি কার্টার ও তার স্ত্রী রোজলিন। তাদের চারটি সন্তান আছে। জিমি কার্টারের জন্ম ১৯২৪ সালে জর্জিয়াতে। ১৯৬০ এর দশকে তিনি রাজ্যের সিনেট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ সালে রাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হন। এর ৫ বছর পর তিনি ক্ষমতাসীন ৩৯তম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু সহসাই তার প্রেসিডেন্সিতে নানা সংকট জেঁকে বসে। দেশে তখন তেলের সংকট থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব দেখা দেয়।

ফলে মার্কিনিদের কৃচ্ছ্রতাসাধনের অনুরোধ জানান তিনি। কার্টারের সময়কালে ১৯৭৮ সালে স্বাক্ষর হয় ক্যাম্প ডেভিড একর্ড। এর অধীনে ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মিশর। এ ছাড়া পানামা ক্যানালকে পানামার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ইরানের শেষ শাহ শাসনের অবসান ঘটে। এরপর পর রাজধানী তেহরানে ৬৬ জন মার্কিনিকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন জিমি কার্টার। চালু করেন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা।

মার্কিনিদের জিম্মিদশা অব্যাহত থাকে ৪৪৪ দিন। এ সময়ে জিমি কার্টার যথেষ্ট করেননি বলে জনগণ মনে করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। জিম্মিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তার জনপ্রিয়তার মাপকাঠি আরও কমে যায়। ওই উদ্ধার অভিযানে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের ৮ জন সামরিক সদস্য। রোনাল্ড রিগ্যান শপথ না নেয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি দেয়া বিলম্বিত করে ইরান। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর কার্টার সক্রিয় থাকেন। তিনি কার্টার সেন্টারের সঙ্গে মানবিক কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।

একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তার ফলে হাইতির সামরিক নেতারা ১৯৯৪ সালে ক্ষমতা স্যারেন্ডার করে। তিনি বসনিয়ায় যুদ্ধবিরতি ঘটান। এর ফলে সেখানে ভবিষ্যত শান্তি চুক্তির পথ তৈরি হয়। মানবাধিকার রক্ষায় কাজের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন জিমি কার্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য এল্ডার্স’। এটি হলো বিশ্বনেতাদের একটি গ্রুপ। তারা শান্তি এবং মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করেন।

শেয়ার করুন