নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ইন্ডিয়া’ নামে আপত্তি ছিল জিন্নাহর, ছিল ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা!

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
‘ইন্ডিয়া’ নামে আপত্তি ছিল জিন্নাহর, ছিল ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা!

ইন্ডিয়া নামটি পুরোপুরি মুছে দিতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসিত নরেন্দ্র মোদী সরকার? এবার থেকে দেশের নাম শুধুই হবে ভারত? এই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নার নাম। আর এই ইস্যুতে এবার মুখ খুললেন কংগ্রেসের শশী থারুর।

ইন্ডিয়া না-কি হিন্দুস্তান ?

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অবসানের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টি হয়। ঠিক তার এক মাসে পরেই লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ‘ডমিনিয়নস অফ ইন্ডিয়া এন্ড পাকিস্তান’ নামের একটি চিত্র প্রদর্শনীতে অনারারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল। অন্যদিকে জিন্নাহও ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। সেই হিসেবে একটি চিত্রকলা প্রদর্শনীতে মাউন্টব্যাটেনের পক্ষ থেকে জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনাটি বেশ স্বাভাবিকই ছিল। তবে জিন্নাহ সেই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছিল।

এক্ষেত্রে মূল কারণ ছিল আমন্ত্রণে ‘হিন্দুস্তান’ শব্দটি ব্যবহার না করে বরং ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাই এক চিঠিতে জিন্নাহ মাউন্টব্যাটনকে বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে, কিছু রহস্যজনক কারণে ‘হিন্দুস্তান’ এর পরিবর্তে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি গ্রহণ করা হচ্ছে। যা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর।”

মূলত জিন্নাহ চেয়েছিলেন যে, ‘ইন্ডিয়া’ নামের পরিবর্তে প্রদর্শনীতে ‘এক্সিবিশন অফ পাকিস্তান এন্ড হিন্দুস্তান আর্ট’ ব্যবহার করা হোক। তবে মাউন্টব্যাটেন সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। শেষমেশ ইন্ডিয়া নামেই জিন্নাহ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

শুধুমাত্র একটি ঘটনাই নয়। বরং দেশভাগের সময় ‘ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া’ নামেও আপত্তি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। যদিও ঠিক কী কারণে এই আপত্তি সেটি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।

তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, দেশভাগের সিদ্ধান্তের পরেও জিন্নাহর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নামমাত্র হলেও একটি ফেডারেশন কিংবা কনফেডারেশন গঠন করা। এক্ষেত্রে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান ও হিন্দু অধ্যুষিত হিন্দুস্তানকে একত্রিত করতে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল তার।

এ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ আয়েশা জালাল বলেন, “এমনটা ভাবা হয় যে, জিন্নাহর পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের ওপর ভিত্তি করে ‘ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া’ গঠনের পরিকল্পনা সবসময়ই ছিল।”

এমনকি শুধু ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়েও বিতর্ক ছিল। কেননা মূলত ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে এই নামটি ব্যবহার করা হতো; যা উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিচয় বহন করে।

তবে পরিশেষে সংবিধানে ‘ইন্ডিয়া’ নামেই নতুন দেশের নামকরণ করা হয়। পাশাপাশি এর হিন্দি পরিভাষা হিসেবে ভারত নামও রাখা হয়। এরপর থেকে অবশ্য বড় কোনো বিতর্ক ছাড়াই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এমনকি হিন্দি গণমাধ্যমগুলোও এখন অনেক সময় ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ব্যবহার করা হয়। তবে রাজনীতিবিদদের একটা ছোট অংশের পক্ষ থেকে অবশ্য সবসময় দাবি ছিল যে, দেশের নামের ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ বাদ দিয়ে শুধু ‘ভারত’ ব্যবহার করা হোক।

সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ ইস্যু যেন ফের আলোচনায় এসেছে। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে বিদেশি অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘ভারত’ লিখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

শুধু তাই নয়, ২০তম আসিয়ান-ইন্ডিয়া সম্মেলনে এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়া যাবেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানেও সরকারি নথিতে তাকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কর্মীরাও দেশের নাম পরিবর্তনকে সমর্থন করেছেন। তাদের যুক্তি এই যে- ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা প্রবর্তন করেছিলেন এবং এটি একটি ‘দাসত্বের প্রতীক’। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ বছর ভারত শাসন করেছিল।

অন্যদিকে গত জুলাইয়ে দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরে কংগ্রেস-সহ দেশের ২৬টি বিরোধী দলের নেতারা মিলে ‘ইন্ডিয়া’ নামে একটি নতুন জোট ঘোষণা করেছেন। এই ‘ইন্ডিয়া’র পূর্ণ রূপ হলো ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স।

২০২৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া ঠেকাতে এবং তার দল বিজেপিকে পরাজিত করতে এই জোট গঠন করেছেন তারা। এরপর থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ বনাম ‘ভারত’ নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে।

এই সম্পর্কে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “দেখুন, মোদি সরকার কতটা বিভ্রান্ত! ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ যাচ্ছেন ২০তম আসিয়ান-ইন্ডিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে। বিরোধীরা একসঙ্গে এসেছে এবং তারা জোটের নাম রেখেছে ইন্ডিয়া। শুধুমাত্র সে কারণেই এখন দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে নাটক করা হচ্ছে।”

শেয়ার করুন