নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনের হাতে উত্তর কোরিয়ার ‘পাগলা রকেট’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ইউক্রেনের হাতে উত্তর কোরিয়ার ‘পাগলা রকেট’

গ্রাড রকেট। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে সমর্থন করে উত্তর কোরিয়া। তারপরও ইউক্রেনীয় গোলন্দাজ বাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার তৈরি রকেট ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ফিনানশিয়াল টাইমস।

খবরে বলা হয়, বিধ্বস্ত শহর বাখমুতের কাছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ফিনানশিয়াল টাইমসের সাংবাদিককে সোভিয়েত আমলে তৈরি গ্রাড মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) দেখিয়েছে, যা ইউক্রেন আগে ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়নি।

ফিনানশিয়াল টাইমস বলছে, ইউক্রেনের অস্ত্রের এই নতুন উৎস প্রমাণ করছে, কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে বড় এই সংঘাতে পুরনো সোভিয়েত অস্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ইত্যাদি দেশের সরবরাহ করা অত্যাধুনিক প্রিসিশন অস্ত্রের সবই ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই অস্ত্রের লেনদেনের কথা উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়া- দুটি দেশই অস্বীকার করেছে।

রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু কোরিয়ান যুদ্ধের সমাপ্তির ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে চলতি সপ্তাহে পিয়ংইয়াংয়ে বিরল এক সফর করেছেন। এসময় তিনি দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মস্কোর কোনো শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার এটাই প্রথম উত্তর কোরিয়া সফর।

ওদিকে, ইউক্রেনীয় গোলন্দাজ বাহিনীর একজন কমান্ডার রুসলান ফিনানশিয়াল টাইমসকে বলেন, উত্তর কোরিয়ার এই রকেট তাদের সৈন্যরা ব্যবহার করতে বিশেষ আগ্রহী না। কারণ এই রকেটে অনেক সময় ভুল ফায়ার হয় এবং বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়।

রকেটের চিহ্ন দেখে সেগুলো ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে তৈরি বলে মনে হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় গ্রাড ইউনিটের একজন সদস্য এফটি সংবাদদাতাকে রকেট লঞ্চারের খুব কাছে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেন, এবং বলেন যে উত্তর কোরিয়ার এই রকেট ‘নির্ভরযোগ্য না, এবং কখনও কখনও পাগলের মতো আচরণ করে।’

উত্তর কোরিয়ার রকেট কিভাবে ইউক্রেনে গেল?

ইউক্রেনের রনাঙ্গণে উপস্থিত গেটি ইমেজেস এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির সাংবাদিকরা গত জুন মাসের শেষের দিকে এবং এমাসের শুরুতে দক্ষিণ জাপোরিশায় ইউক্রেনের আর্টিলারি বাহিনীকে উত্তর কোরিয়ার রকেট ব্যবহার করতে দেখেছিলেন। কিন্তু তখনও সেগুলো উত্তর কোরিয়ায় তৈরি বলে সনাক্ত করা যায়নি।

ইউক্রেনের সৈন্যরা বলছে, কোন এক ‘বন্ধু দেশ’ একটি জাহাজ থেকে এসব রকেট ‘জব্দ’ করেছিল। তবে এ নিয়ে তারা আরও বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন।

ওদিকে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, রুশ বাহিনীর হাত থেকে রকেটগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ইউরি স্যাক বলছেন, আমরা তাদের ট্যাঙ্ক দখল করি, আমরা তাদের সরঞ্জাম দখল করি, এবং খুবই সম্ভব যে এগুলোও ইউক্রেনীয় সামরিক অভিযানের ফসল। রাশিয়া উত্তর কোরিয়া এবং ইরানসহ নানা দেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের যুদ্ধাস্ত্র কেনাকাটা করছে।

ফিনানশিয়াল টাইমস জানাচ্ছে, উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনকে সরাসরি যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

কারণ, পিয়ংইয়াং সরকার ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে সর্বতোভাবে সমর্থন করে আসছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এজন্য উত্তর কোরিয়াকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

গত মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে মস্কোর সরকার খাদ্যের বিনিময়ে অস্ত্র জোগাড়ের জন্য উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনা করছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবিও অভিযোগ করেছিলেন, বাখমুত দখলের লড়াই যখন তুঙ্গে তখন উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদল ওয়াগনার গ্রুপের কাছে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে।

তবে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন সে সময় এই অভিযোগটিকে ‘গালগল্প এবং জল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

গ্রাড রকেট কী?

‘গ্রাড’ শব্দের অর্থ শিলাবৃষ্টি। এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে তৈরি একটি স্বচালিত ১২২মিমি রকেট সিস্টেম। ট্রাকের ওপর বসানো টিউব থেকে ২০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে এই সিস্টেম থেকে ৪০টি পর্যন্ত রকেট নিক্ষেপ করা যায়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গ্রাড রকেটকে ‘নির্বিচার এক কুখ্যাত অস্ত্র’ বলে বর্ণনা করেছে। তবে ইউক্রেনে ২০১৪ সালের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ এবং নিয়মিত লড়াই শুরু হওয়ার পর রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুপক্ষই এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন