নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমি কখনো মাথানিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩ | ০১:০৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ | ০১:০৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আমি কখনো মাথানিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না

ছবি: নিহার সিদ্দিকী

ওয়াশিংটন : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা-মা এবং তিন ভাইসহ সবকিছু হারিয়ে দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। দেশের জনগনই আমার আপনজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে জীবনের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে আমি কখনই মাথা নত করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো মাথানিচু করে দেশবাসীকে অসম্মান করতে চাই না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জতির জনক’ বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ নিয়ে দেশ-বিদেশে আজো ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান।

বিশ্ব ব্যংাকের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনার তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২ মে) ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়া রাজ্যের রিটজ কার্লটন হোটেল বলরুমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। অনুষ্ঠানে মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন উপবিষ্ট ছিলেন।

সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণের শুরুতে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে পরিচিত হন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের শাখা আওয়ামী লীগের নাম ধরে ডেকে ডেকে তাদের সাথে পরিচিত হন। এসময় দলীয় নেতা-কর্মীরা হাত তুলে ও শ্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি জানান, শীতের মধ্যে যারা হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছেন তাদেরকে এসে দাবী-দাওয়া জানানোর কথা বলেন এবং চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ৭৫-এর ১৫ আগষ্টের মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও ৮১ সালে তার দেশে ফেরা ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক দল ক্ষমতায় এসেছে তারা কি সেই বাসন্তীদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছে। আমি বাসন্তীর বাড়ীতে গিয়েছি, তার খোঁজ নিয়েছি। বাসন্তী-কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদার সরকার দেশকে দূর্নীতি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল বলেই আজ দেশ বিশ্বে উন্নয়নের মডেল এ পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে আমাদের সংবিধানে মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের পর, জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দীর্ঘ ২১ বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজ অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর মানবাধিকার কোথায় ছিলো? আইন করে আমার বাবার হত্যার বিচার রহিত করা হয়েছিলো।

প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে আরও বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের উপর জোর দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে মাথা উচু করে চলার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীরা শ্লোগানে মুখরিত করে তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্লোগান দিলে চলবে না, ভোটে জিততে হবে। নির্বাচনের সময় শ্লোগান দিতে হবে। তিনি আগামী দিনের বিশেষ করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, সমালোচানাকারীদের মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আমন্ত্রণে আমি এসেছি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋন প্রদান বন্ধ করেছিলো। কিন্তু ঘরের মানুষ যদি ষড়যন্ত্র করে তাহলে অন্যেও দোষ দিয়ে লাভ কি? তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, দেশে একজন আছেন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, জনগণেরস্বার্থের কথা বলে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে নিজেই লাভবান হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সেও আইন অমান্য করে ঐ ব্যাংকের এমডি থাকতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, নানা বিরোধীতা, কানাডায় মামলার পরও দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়ার কারনেই নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মা সেতু নির্মান করতে পেরেছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাঙালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পরবে না। তিনি বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ, মেট্রো রেল হয়েছে, আগামী কর্নফুলি টানেল হবে, পাতাল রেল হবে। বিদ্যুৎ, রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থ্যায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দেশে সব ঘরে আলো জ্বালিয়েছি। কোন ঘন অন্ধকার নেই। একদিনেই ১০০ রাস্তা, আরেকদিনে ১০০টি সেতু উদ্বোধন করেছি। ১০০টা অথনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে। প্রবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য কোঠা থাকবে। প্রয়োজনে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের জন্য পৃথক অঞ্চল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পেরেছি, আমরাই পরবো।

উল্লেখ্য, সোমবার বিশ্ব ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি সমাবেশের সময় মারামারি ঘটনায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনায় রিটজ কার্লটন হোটেলের সামনে ব্যাপক নিরাপত্তা ছিলোল লক্ষনীয়। – সালাহউদ্দিন আহমেদ (ইউএনএ)

সুইটি/পরিচয়

শেয়ার করুন