নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উইন রোজারিও হত্যার বিচার দাবী, পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর : শনিবার অন্তেষ্টিক্রিয়া

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০৪:৩০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
উইন রোজারিও হত্যার বিচার দাবী, পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর : শনিবার অন্তেষ্টিক্রিয়া

Screenshot

নিউইয়র্কের ওজনপার্কে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক উইন রোজারিও অন্তেষ্টিক্রিয়া আগামী শনিবার (৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি চলছে। এদিকে সোমবার (১ এপ্রিল) তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতোদিন তার মরদেহ জ্যামাইকা হাসপাতালের মর্গে ছিলো। রোববার এসব কথা জানিয়ে উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক উইন রোজারিওর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুলিশের দোষ প্রমাণ হলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি।

জ্যাকসন হাইটসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
অপরদিকে পুলিশের গুলিতে উইন রোজারিও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে নিউইয়র্কে। গত ২৯ মার্চ শুক্রবার বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রবাসী বাংলাদেশী খ্রিস্টান এসোসিয়েশন ও লাল মরিচ নামে দুটি সংগঠন আলাদাভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। এসোসিয়েশনের সভাপতি গাব্রিয়েল তাপস হোমেজ এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি সহ ৪ দফা দাবী উপস্থাপন করা হয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, মানসিক অসুস্থ একজন তরুণের প্রতি সংবেদনশীলতা না দেখিয়ে তাকে মায়ের সামনে গুলি করে হত্যা করে নিউইয়র্ক পুলিশ অমানবিক ও নিষ্টুরতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মানবাধিকারের তীর্থভূমি যুক্তরাষ্ট্রে এ ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সমাবেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন অংশ নেন। সমাবেশ থেকে ঘটনার সময়ে রেকর্ডকৃত পুলিশের বডিক্যাম ফুটেজ প্রকাশ করার দাবী জানানো হয়। এছাড়া ন্যাক্কারজক এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও তাদেরকে ফৌজদারী আইনের আওতায় এতে বিচারেরও দাবী জানানো হয়। এ ঘটনায় ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও নিউইয়র্ক মেয়র এরিক এডামস কোন বক্তব্য বা নূন্যতম সহানুভূতি প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশী খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয়, জোসেফ বিকাশ ডি কস্তা, চিত্তা রোজারিও, জেমস কুরাইয়া, ‘স্যাফেস্ট’র প্রধান নির্বাহী মাজেদা এ উদ্দিন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট এএফএম মিসবাহুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সুখেন গোমেজ।

প্রবাসী বাঙালী খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বকারীরা। ছিলেন পেশাজীবী এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরাও। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রচন্ড ক্ষোভ দেখায় এই সমাবেশ থেকে।

সমাবেশে ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, উইন রোজারিওর পরিবার এই হত্যাকান্ডে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর জন্য তার সহযোগী ফার্মকে নিযুক্ত করেছেন। ইতিমধ্যেই তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বডি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। সবকিছু তাদের ফার্মের বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখবেন।

এটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী উইন রোজারিওর হত্যার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছেন নিউইয়র্ক স্টেট এটর্নি জেনারেল। পাশাপাশি আমাদের ফার্মও তদন্তে নেমেছে। ন্যায়বিচারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে লড়ে যাবো।

এদিকে সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে নিউইয়র্কে একইস্থানে উআন রোজারিও হত্যার বিচার দাবীতে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে আঞ্চলিক সংগঠন গাজীপুর জেলা এসোসিয়েশন ইউএসএ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইসহাকমোরা বাবুর সঞ্চালনায় উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিতথেকে বক্ত্যব্য প্রদান করেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশেরে কন্সালজেনারেল নাজমুল হুদা, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আবদুর রব মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির আবু তাহের, নাট্যজন খায়রুল ইসলাম পাখি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদুল হাসান ও গাজীপুর জেলা এসোসিয়েশন ইউএসএ-র সভাপতি এমডি জুয়েল প্রমুখ।

বাংলাদেশের সোসাইটির তীব্র নিন্দা
বাংলাদেশ সোসাইটি’র এক প্রেস বিজ্ঞপ্ততে বলা হয়েছে: নিউইয়র্ক সময় ২৭ মার্চ ১:৪০ মিনিটের দিকে ওজোনপার্ক ১০৩ স্ট্রিট, ১০১ এভিনিউ’র নিজ বাসায় মা আর ছোট ভাইয়ের সামনেই নিউইয়র্ক পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারলো মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশী তরুণ উইন রোজারিও। তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। তার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ গোটা কমিউনিটি। বাংলাদেশ সোসাইটি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সাথে ঘটনার সুষ্ঠ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছে। ঘটনার খবর শোনার সাথে সাথে সোসাইটির কর্মকর্তারা নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

এদিকে কমিউনিটির অন্যান্য সংগঠনকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর ইউএনএ’র।

শেয়ার করুন