নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না – ইউনূসের রায় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ | ০২:২৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ | ০২:২৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না – ইউনূসের রায় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “একজন ব্যক্তির কারণে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব না পড়াটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, এবং ওনার আবেদন করার সুযোগ আছে, উনি জামিনও পেয়েছেন। সুতরাং, একটা চলমান আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, এর চেয়ে বেশি কমেন্টস (মন্তব্য) আমি করতে চাই না।”

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলা‌দে‌শের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না ব‌লে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সোমবার (১ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই মুল্যায়ন করেন তিনি। পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেন, “একজন ব্যক্তির কারণে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব না পড়াটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, এবং ওনার আবেদন করার সুযোগ আছে, উনি জামিনও পেয়েছেন। সুতরাং, একটা চলমান আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, এর চেয়ে বেশি কমেন্টস (মন্তব্য) আমি করতে চাই না।”

শ্রম-সংক্রান্ত প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের শ্রমখাতের কিছু ইস্যু রয়ে গেছে। যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ হচ্ছে। এই বিষয়ে আমরা আরও সিরিয়াসলি কাজ করতে চাই। শ্রম বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে রোডম্যাপ আছে তা যেন আমরা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি– সেই চেষ্টা করব। এতে বাণিজ্য নিয়ে যেসব ধারণামূলক কথাবার্তা চলছে, তা প্রতিহত করা যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের শ্রমিকদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। শিশুশ্রম নিয়ে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি, আরো নিতে হবে। এগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই।”

এর আগে ড. ইউনূস-সহ চারজনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে, ড. ইউনূসকে এক মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে।

আদালতের রায়ে ড. ইউনূস ছাড়া অন্য যে তিন জন সাজা পেয়েছেন, তাঁরা হলেন: গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালনাপর্ষদের সদস্য- নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। আদালত তার রায়ে বলেছেন, জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁদের আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড হবে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে দোষ করি নাই– সেই দোষে সাজা পেলাম। এটা আমার কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল। আমরা এই রায় গ্রহণ করেছি, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এই সাজার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, “আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু, এ আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে। এসময় আদালত বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত।”

২৪ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক ১ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিরুদ্ধে এই মামলা করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এরপর গত ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ইউনূসসহ বাকিরা। ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরি এবং বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ আনা হয় মামলায়। তাছাড়া মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইন ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

শেয়ার করুন