নিউইয়র্ক     সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনের আগে আসনের ভাগ চায় বিএনপির মিত্ররা

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩ | ১০:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ | ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আন্দোলনের আগে আসনের ভাগ চায় বিএনপির মিত্ররা

ঈদুল আজহার পর সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি। আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। নির্বাচনে বিজয়ী হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে থাকা শরিকদের নিয়ে গঠন করা হবে জাতীয় সরকার। এই ঘোষণা যুগপৎ আন্দোলন শুরুর আগের। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন চলাকালে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠকে আগামী নির্বাচন এবং জাতীয় সরকারে যোগ্যতা অনুযায়ী মিত্রদের যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাসও দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু প্রধান শরিকের এই আশ্বাসে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না যুগপতের শরিক দলের অনেকে। বিশেষ করে নির্বাচনে শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড় দেবে—বিএনপির কাছ থেকে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা নিয়েই সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা। যুগপতের একাধিক শরিকের সঙ্গে আলাপকালে তারা এমন মনোভাবের কথা জানায়।

বিএনপির মিত্ররা মনে করছেন, চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলন দমাতে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। সেক্ষেত্রে মামলা-হামলা ও ধরপাকড়ের বিষয়টিও বাড়বে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে ভবিষ্যতে কী পাবে না পাবে—সে হিসাব মেলাতে চায় অনেক শরিক দল। আন্দোলনে দাবি আদায়সাপেক্ষে বিএনপি নির্বাচনে গেলে, তখন শরিকদের জন্য কতটি আসন দেওয়া হবে, কাকে কাকে ধানের শীষ দেওয়া হবে, এ ব্যাপারে এখনই বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান কিংবা ন্যূনতম অঙ্গীকার চান তারা।

বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তখন জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি, ২০ দলীয় জোটকে ৩৯টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯ আসন দেয় বিএনপি। ৩০০ আসনের মধ্যে তারা দলীয়ভাবে ২৪২ আসনে ভোট করেছিল।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু কালবেলাকে বলেন, আমাদের মনোযোগ এখন আন্দোলনের দিকে। এই সরকারের পতনের পর দেশে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করব। তখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো, তারা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন; তাদের ওই নির্বাচনে অংশীদারত্ব দেওয়া হবে এবং বিজয়ের পর তাদের জাতীয় সরকারেও জায়গা দেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে এটাই আমাদের আলোচনা।

যুগপতের শরিক একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে এখন পর্যন্ত শরিকদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। কোনো কোনো বৈঠকে শরিকদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে বিষয়টি বিএনপির কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলন-পরবর্তী নির্বাচন ও সরকার গঠনে বিএনপি কীভাবে শরিকদের মূল্যায়ন করবে—সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না প্রধান শরিক দলটি। তবে তাদের পক্ষ থেকে মৌখিক আশ্বস্ত করা হয়েছে, শরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু সেই যোগ্যতার মাপকাঠি কী, সেটাও বিএনপিকে স্পষ্ট করতে হবে। এ ব্যাপারটির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে অনেকের অনীহা রয়েছে বলে দাবি শরিক কয়েকটি ছোট দলের।

যুগপতে সম্পৃক্ত একটি জোটের একজন নেতা বলেন, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিগত নির্বাচনে কম গুরুত্বপূর্ণ অনেককে আসন দিলেও জাগপার প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের কন্যা তাসমিয়া প্রধানকে ধানের শীষ দেয়নি বিএনপি। অথচ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে শফিউল আলম প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। কিন্তু সেই জাগপাকেই বঞ্চিত করা হয়।

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার বাইরে জেলা ও মহানগরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে মিত্ররা। ৩৮টি রাজনৈতিক দল আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে শরিক কয়েকটি দলের আপত্তিতে কৌশলগত কারণে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি। তবে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ‘১২ দলীয় জোট’ ও ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠন করে যুগপতে সম্পৃক্ত রয়েছে। আর কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পৃথকভাবে যুগপতের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। এ ছাড়া কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি এবং ১২ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে লেবার পার্টিও পৃথকভাবে এই আন্দোলনে শরিক হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার পর আন্দোলন আরও বেগবান করবে বিএনপি। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি ও মিত্ররা। এখন কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে মিত্রদের কাছ থেকে কর্মসূচির প্রস্তাবনা নিয়েছে। তারা বিএনপিকে এখন সাদামাটা কর্মসূচি দিয়ে ঈদুল আজহার পর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছে। চলমান এসএসসি পরীক্ষা, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ও বর্ষা মৌসুমসহ সবকিছু বিবেচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

এদিকে যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা নিয়ে গত ৮ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ওই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়, আন্দোলন আরও বেগবান হলে তা দমাতে যুগপতের শরিক কিছু দল ও জোটকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রলোভন দেখানো হতে পারে। বিশেষ করে নিবন্ধিত দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে এমপি বানানোর প্রস্তাব দিতে পারে সরকার। তাই মিত্রদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির এমন শঙ্কার প্রসঙ্গ টেনে ১২ দলীয় জোটের এক নেতা বলেন, সরকার যেখানে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শরিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে—সেখানে বিএনপির অবশ্যই শরিকদের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।

১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার কালবেলাকে বলেন, আমরা আন্দোলনে দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে চায়। তবে নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি। আন্দোলনের একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়েই কেবল নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে, নিশ্চয়ই হবে। এখনো সেটা পরিপক্ব হয়নি। সূত্র : কালবেল

সুইটি/পরিচয়

শেয়ার করুন