নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০ দল বিলুপ্ত করে ১২ দল

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০১:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০১:১৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
২০ দল বিলুপ্ত করে ১২ দল

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করে সমমনা ১২টি দলের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সময় লিখিত বক্তব্যে লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে বিএনপির ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন ও ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

১২ দলীয় এই জোটে রয়েছে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা বিএলিডিপি (একাংশ), অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, একাংশ)। জোটের একাধিক নেতা জানান, যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ১২টি রাজনৈতিক দল।

জোটের পক্ষ থেকে ৭ দফা কর্মসূচি দেয়া হয়। দফাগুলো হলো-

১. আমরা বাংলাদেশের ১২টি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথের সকল কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ১২ দল নামেই পরিচিত থাকবো।

২. দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভই আমাদের সকলের অভিন্ন লক্ষ্য মনে করি।

৩. আমরা বিশ্বাস করি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থের অনুকূলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দলীয় সরকারের অধীনে বিনা ভোট ও রাতের ভোট নামক ভোটারবিহীন কারচুপির নির্বাচন হিসেবে দেশে-বিদেশে সমালোচিত ও নিন্দনীয় হয়েছে এবং নির্বাচনের সকল গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তদুপরি অগণতান্ত্রিক, অসংবিধানিক এবং সম্পূর্ণ গায়ের জোরে একটি অনির্বাচিত সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতাসীন ছিলো এবং আছে।

৪. ভোটার বিহীন অনির্বাচিত সরকার আগামী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও একইভাবে জনগণের ভোটকে পাশ কাটিয়ে নতুন কোনো কলা-কৌশল খাটিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনের হ্যাটট্রিক করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এবারে রুখে দাঁড়িয়েছে। “বারবার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবে না, দেবো নাকো আর ধান”। বিএনপি’র দশটি বিভাগীয় সমাবেশ প্রমাণ করেছে দেশের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক গণজাগরণ। সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে তাই শুরু করেছে হামলা মামলা গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা।

৫. এমতাবস্থায় আমরা ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার জন্য বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপি ঘোষিত দশ দফা কর্মসূচি এবং ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচিকে জাতীয় মুক্তির সনদ বিবেচনা করে একাত্মতা ঘোষণা করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এবং সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি ঘোষিত সকল আহ্বান এবং আন্দোলনের যুগপৎ অংশগ্রহণ করার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি।

৬. আমরা বিনা ভোটে নির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পদত্যাকে বাধ্য করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ দল বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবো।

৭. দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। দেশ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনীত। দীর্ঘ ১৪ বছরের লুটপাট ও দুঃশাসন জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে।

চারদলীয় জোটের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। ডানপন্থি ও মধ্য-ডানপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী এ জোট গড়ে উঠেছিল।

১২ দলের নতুন জোট ঘোষণার সময় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, একটা কথা আমি জোরের সাথে বলতে পারি, এদেশের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপির সাথে আমাদের যে ঐক্য, যে সমঝোতা, যে হৃদয়ের বন্ধন, তা অটুট থাকবে যেমন আগে ছিল, এখনো তেমনি আছে। আমরা আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল, যারা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরোধী, তাদেরকে এক কাফেলায় শামিল করার জন্য একটু ভিন্ন পথ এবং কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।

২০ দলীয় জোটের ভাঙন নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই’ মন্তব্য করে মোস্তফা জামাল বলেন, আমরা সকলে মিলে এ টু জেড ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের পথে যুগপৎভাবে আন্দোলনে এগিয়ে যাব।

আরোও পড়ুন।বিএনপির সঙ্গে নতুন করে সংলাপের কোনও সুযোগ নেই: সিইসি

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। সেখানে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা ‘২০ দলীয় জোট’ নামটি আর ব্যবহার না করতে বলেন। তারা বলেন যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা একসাথে চলতে পারি। এরূপ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পর ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব আর থাকে না। বস্তুত সেই ঘোষণারও ১০ দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মহোদয় বলেছিলেন যে, ২০ দলীয় জোট আর নাই। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ২০ দলীয় জোটের জন্ম হয়েছিল, কিন্তু ২০ দলীয় জোটের বিলুপ্তটা আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি, অনানুষ্ঠানিভাবে হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ছিলাম ২০টি দল। ২০টি দলের মধ্যে প্রধান শরিক বিএনপি বাদ দিলে থাকে ১৯টি দল। দ্বিতীয় সারিতে জামায়াতে ইসলামী বাদ দিলে থাকে ১৮। জনাব পার্থের (আন্দালিব রহমান পার্থ) দল বিজেপি চলে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে, থাকে ১৭। খেলাফত মজলিশ চলে গিয়েছিল ২০১৯ সালে, থাকে ১৬। সেই ১৬ জনের মধ্যে আপনাদের সামনে আমরা ১২টি দল উপস্থিত আছি।

তবে হ্যাঁ, এর মধ্যে বক্তব্য আছে। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল ছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, যার সভাপতির নাম অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তার দলটি আমাদের এখানে নাই। তার দলের সাবেক অতি জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল করীম আব্বাসী এবং শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে একটি দল হয়েছে, যার নাম বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), উনারা এখানে আছেন। আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে, ২০১৯ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। মূল অংশের মরহুম শফিউল আলম প্রধানের সুযোগ্য কন্যা ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান আমাদের সঙ্গে আছেন। বিদ্রোহীরা এখানে নেই।

ইবরাহিম বলেন, ১২ দলীয় জোটের কর্মসূচি আগামীতে ঘোষণা করা হবে। ৩০ ডিসেম্বরের পরে তারা বিভাগীয় শহরগুলোতে যেতে চান। তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো সম্মিলিতভাবে নেওয়া হয়নি। আমরা বিএনপির সকল কর্মের সঙ্গে যুগপৎ থাকবই। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করব। আমরা সেদিন বিজয় নগর পানির ট্যাংকের কাছে ইনশাল্লাহ মিলিত হব দুপুর ২টায়। সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

শেয়ার করুন