নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৪ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ী হবেন শেখ হাসিনা- ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:১৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
২০২৪ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ী হবেন শেখ হাসিনা- ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যায়। ঋণ দরকার হলেও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা হারানোর ভয়ে সংস্থাটির দেওয়া শর্ত পূরণ করতে বেশিরভাগ দেশ গড়িমসি করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। আইএমএফের কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে তাকে তেমন একটা দ্বিতান্বিত মনে হয়নি। রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ সম্প্রতি আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। বাকি দুইটা হলো পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এই দেশ দুটির অবস্থা যে কোনো অর্থের বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো এই দুই দেশেও ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ অবস্থায় ভর্তুকি কমানো, জ্বালানি দাম বাড়ানো, কর বাড়ানো, ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঢেলে সাজানোর মতো কঠিন ও রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শর্ত থাকায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আইএমএফের ঋণ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করছে। কিন্তু সবার শেষে গত জুলাইয়ে ঋণের জন্য আবেদন করে ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তির ঋণ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

প্রথম কিস্তির ঋণ পেতে আওয়ামী লীগ সরকার চট করে জ্বালানির মূল্য বাড়িয়েছে। অথচ এ রকম অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের জন্য কোনো অনুতাপ প্রকাশ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে কয়েক কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পাবে। প্রথম কিস্তিতে ইতোমধ্যে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম কিস্তির ঋণ কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তার পর্যালোচনা হবে। তারপর পরবর্তী কিস্তি দেওয়া হবে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি আইএমএফের ঋণ নিশ্চিত করার এক সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কেবল তখনই সরবরাহ করা সম্ভব হবে যদি সবাই ক্রয়মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হয়। আপনারাই বলেন, কতই বা ভর্তুতি দেওয়া যেতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা, কেনই বা সরকার ভর্তুতি দেওয়া অব্যাহত রাখবে?

নির্বাচনের আগে কোনো রাজনৈতিক দলকে সাধারণত এভাবে কথা বলতে শোনা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের নেতাদের মতো নয়। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ী হবেন শেখ হাসিনা।

এজন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বলেন উইলসনস সেন্টারস সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। তার মতে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে শাসক দল সরকার বিরোধী যে কোনো ক্ষোভ বা গণরোষ সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। শেখ হাসিনার সেই ক্ষমতা রয়েছে। তাই তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন।

ব্লুমাবার্গের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশ আইএমআফের কাছে যাওয়ার একটা প্রধান কারণ ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় বেড়েছে আমদানি খরচ। ফলে আমাদানি ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের মুদ্রার মান সম্প্রতি এক-পঞ্চমাংশ কমে তিন বছরের নিচে নেমে এসেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের মোট বাজেটের প্রায় এক দশমাংশ ভর্তুকিবাবদ ব্যয় করা হয়। এ সমস্যা কিছুটা কমাতে বিদ্যুৎ খাত ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা খাতুন বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জবাবদ যে অর্থ অপচয় করেছে তা একটি মূল সমস্যা। তাই বিদ্যুৎ খাত সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছা দরকার। কারণ সরকার দুর্বল হলে ধনীরাই লাভবান হবে, ভুক্তভোগী হবে গরিবেরা।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের ভোক্তাপর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। কয়েক মাস কমার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার বাড়ছে। এ অবস্থায় জীবন-যাপনের ব্যয় টানা বৃদ্ধিকে মূল ইস্যু করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার পতন চায় বিএনপি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে না যাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চায় না। ওই নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, ভোট জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

গত ডিসেম্বরে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়েছিল। ঢাকা শহরে জড়ো হয়েছিল বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক। কিন্তু দাঙ্গা পুলিশের বুলেট ও কাঁদানের গ্যাসে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে বিরোধী নেতা-কর্মীরা। ডিসেম্বরের বিক্ষোভের পর বিএনপি আরও চাপে পড়ে। কারণ এরপর দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে ঢোকানো হয়। দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থাগিত করা হয়। তিনি এখন নজরবন্দীতে রয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতারা ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন। বৈঠক তারা বলছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে ২০২৪ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

তবে ক্ষমতায় গেলে নিজেরাও আইএমএফের সংস্কার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবেন বলে গত মাসে মন্তব্য করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সূত্র: ব্লুমবার্গ

শেয়ার করুন