নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাহিত্যকর্ম ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে পাঠক বাড়বে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:৫৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ | ০১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সাহিত্যকর্ম ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে পাঠক বাড়বে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করে ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে পাঠক বাড়বে। গত ১লা ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

‘আধুনিক যুগ ডিজিটাল যুগ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভাষা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারি। আমাদের বইগুলোকে ডিজিটালাইজ করা, অডিও ভার্সন করা যেতে পারে। আজকাল অনেকেই পড়তে চায় না। কিন্তু একটা ফোন কানে দিয়েও শুনতে পারে। কাজেই বইয়ের অডিও ভার্সন করা যেতে পারে। প্রতিটি সাহিত্যকর্ম যদি অডিও ভার্সন করে দিই এবং ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে আসি, তবে আরও পাঠকশ্রেণী পাব।’

‘এখনকার যুগে কেউ আর বই খুলে পড়তে চায় না। হাঁটতে-চলতে কোথাও যেতে যেতে পড়তে পারে তা করে দেওয়া উচিত। তবে এটা ঠিক আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এভাবে শুনে ওই তৃপ্তি পাওয়া যায় না, যেটা বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে পড়তে যে আরাম, যে স্বস্তি সে অনুভূতিটা পাওয়া যাবে না,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা আমাদের ভাষা, আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলি। পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের এ অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছিল। এ অধিকার আমাদের আদায় করতে হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত দিয়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ভাষার অধিকার থেকেই আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার সুফল যেমন ছড়িয়ে দিতে হবে, তেমন ভাষার উৎকর্ষও ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকে আমি বইমেলায় আসি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তো আসতেই হয়। আমি সবসময় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরি ব্যবহার করতাম। আজ দীর্ঘদিন পর এখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার একটা ঐতিহ্য আছে। শুধু এটুকু বলি বাংলা ভাষাকে একসময় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের যে প্রচেষ্টা ছিল, তা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮। তার কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকরা একটা বিজাতীয় ভাষাকে আমাদের ওপর চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাঙালি কিন্তু পরাভব মানে না।’

‘জাতির পিতা আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলা একাডেমি এ ধরনের বিশেষ সাহিত্য মেলার আয়োজন করতে পারে। জেলায় জেলায় এখন বইমেলা হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদ হবে। সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। বাংলা একাডেমি ও মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ কাজটা করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য যারা একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে কথা বলছেন তাদের নিন্দা করে ২০০৭-২০০৮ সময়কালে এমন সরকারের কাছ থেকে কারা লাভবান হয়েছিল তা ভাবতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ সালে একটি অনির্বাচিত সরকার (বাংলাদেশে) ছিল এবং এতে কার কী লাভ হয়েছিল? বরং অশুদ্ধ হয়েছিল দেশের সংবিধান। ক্ষতি হয়েছিল দেশের মানুষের জীবনমানের।’তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে (তথাকথিত) খুব জ্ঞানী বিজ্ঞানী আছেন। তাদের কাছে আবার এটাও শুনলাম দুই-চার বছরের জন্য যদি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলেও তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আপনারা বুঝতে পারেন কারা বলতে পারে? ২০০৭-২০০৮ সালে তো অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, কার কী লাভ হয়েছিল? কারণ, কিছু এগাছের ছাল ওগাছের বাকল নিয়ে একটা দল করার চেষ্টা, এ দল সে দল থেকে ভিড়িয়ে দল করার চেষ্টা, আমরা রাজনীতিবিদরা সব খারাপ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হলো এবং কিছু কিছু সুযোগ সন্ধানী তখন মাথা তুলে দাঁড়ালো এবং কিংস পার্টি গঠনসহ বিভিন্ন রকম প্রচষ্টা চালালো।

প্রধানমন্ত্রী এর উত্তরে বলেন, মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক। কিন্ত অশুদ্ধ হবে আমাদের সংবিধান। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং এর ৮ মাসের মাথায় জাতির পিতা আমাদের দিয়েছিলেন এই সংবিধান। আর অশুদ্ধ হবে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান। কারণ, ওই দুই বছরের অভিজ্ঞতা যদি একটু স্মরণ করেন। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, সহিত্য চর্চা, অথনৈতিক অবস্থা সবই বিপর্যস্থ হয়ে গিয়েছিল। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন তখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

সেই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে এবং বাকি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়। এরপর থেকে জনগণের জন্য কাজ করে জনণের সমর্থন নিয়েই আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছে, বলেন তিনি। তার সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করেছিল বলেই দেশে এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংস্কৃতি সচিব মো: আবুল মনসুরও বক্তব্য রাখেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ ও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ; রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত ‘আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি’ এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১মখণ্ড)। এছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্ত ১৫ জন কবি লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রুব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (বিজ্ঞান/বিজ্ঞান কথাসাহিত্য/পরিবেশ বিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী/স্মৃতিকার/ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক এবং মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে লোককাহিনীতে)।

এর আগে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কন্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই সকলে অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টলগুলো ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা সূত্র : বাসস

শেয়ার করুন