নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাভারে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:০২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:০২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সাভারে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার অন্যতম হিসেবে পরিচিত এবং সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই। গত ২৯ মার্চ বুধবার ভোররাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। ঐদিনই ঢাকার সাভারে নিজের তৈরি মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের সাবেক আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী এই মহান বীরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন। মুজিববাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি।’ রাষ্ট্রপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নুরে আলম সিদ্দিকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ছয়-দফা আন্দোলন এবং ’৭০-এর নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতির এই সাহসী সন্তানের অবদান পরবর্তী প্রজন্ম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

পৃথক শোকবার্তায় স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের চার খলিফা খ্যাত জ্যেষ্ঠ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শোক বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন। ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনসহ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনগুলোতে তার সক্রিয় ভূমিকা ও অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ড. মোমেন শোকবার্তায় মরহুম নূরে আলম সিদ্দিকীর রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহ্কাম উল্লাহ শোক প্রকাশ করেন।

নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রেস সচিব কবি ও বাচিক শিল্পী অনিকেত রাজেশ জানান, হাসপাতাল থেকে নূরে আলম সিদ্দিকীর মরদেহ ২৯ সার্চ বুধবার সকাল ১০টায় তার মরদেহ হেলিকপ্টারে করে ঝিনাইদহে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজার পর বাদ আসর ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হয়। এ সময় নূরে আলম সিদ্দিকীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এর পর সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে তাকে কবরস্থ করা হয়।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে অনিকেত রাজেশ জানান, এ বিষয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী জীবদ্দশায় বলে গেছেন তাকে শহীদ মিনারে নেওয়ার দরকার নেই।

অনিকেত রাজেশ সম্পাদিত নূরে আলম সিদ্দিকীর লেখা ‘সেকালের রাজনীতি ও ছাত্রলীগ’ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের স্নেহস্পর্শে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদভিত্তিক চেতনায় গড়ে উঠেছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।

বৃহত্তর যশোরের ঝিনাইদহে ১৯৪৪ সালের ২৬ মে জন্মগ্রহণ করেন নূরে আলম সিদ্দিকী। সত্তরের দশকের তুখোড় এ ছাত্রনেতা ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন যশোর-২ (বর্তমানে ঝিনাইদহ-২) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু অন্যতম বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ-ত্যাগ করেননি।

ঝিনাইদহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা : নূরে আলম সিদ্দিকীকে শোক ও শ্রদ্ধায় ঝিনাইদহের সর্বস্তরের মানুষ বিদায় জানিয়েছেন। ঝিনাইদহ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির বাবা। তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে গতকাল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। চোখের জলে প্রিয় মানুষকে বিদায় জানিয়েছেন অনেকেই। সকালে ঢাকা থেকে তার নিজ জন্মভূমি ঝিনাইদহে জানাজার জন্য হেলিকপ্টারযোগে তার মরদেহ শহরের সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ঝিনাইদহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।

জানাজায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এমপি, জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম, পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশীদ, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদল মজিদসহ রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম থেকে আবারও ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

শেয়ার করুন