নিউইয়র্ক     সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকার কি একা হয়ে পড়ছে?

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২ | ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২২ | ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সরকার কি একা হয়ে পড়ছে?

সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য সাতটি রাজনৈতিক সংগঠনের নতুন জোট “গণতন্ত্র মঞ্চ” বাংলাদেশে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি জোটকে স্বাগত জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চকে তাদের আন্দোলনের ফসল বলেছে। তাদের কথায়, ” তাদের এবং আমাদের লক্ষ্য এক।” জাতীয় পার্টিও রাজপথে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছেন,” সরকার ও আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের এখন জোটগত কোনো সম্পর্ক নেই।” তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন,তাদের কোনো জনভিত্তি নেই। সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়া কেউই কিছু করতে পাববে না।

বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। ওই দিন একই কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এটা যুগপৎ কোনো আন্দোলন কি না, জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,”আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এরকম কোনো ঘোষণা দিইনি। তবে এভাবেই আমরা এভাবেই আন্দোলন করব। ধরে নিতে পারেন আমরা একই ইস্যুতে আলাদাভাবে কর্মসূচি দিয়েছি।” সোমবার “গণতন্ত্র মঞ্চ” গঠন হওয়ার পর বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিই তাদের প্রথম কর্মসূচি।

মঞ্চের শরিক দল গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন,”বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের সাহযোগী ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই এই সরকারের পতন এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা কাজ করব।”

গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল হলো, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দলের নেতারা সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন,”দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই মঞ্চ গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্র, সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারব্যবস্থা নিয়ে মঞ্চের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবসহ দাবি আছে।”

মঞ্চের নেতা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন,”আমাদের মঞ্চে বিএনপিসহ সমমনা যেকোনো দল যোগ দিতে পারে। আর আমাদের ধারণা এরকম আরো মঞ্চ হবে। আমাদের মঞ্চে যে যোগ দিতে হবে তা নয়। আমরা আলাদা আলাদা কাজ করব একই উদ্দেশ্যে। আমাদের লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ও তাদের দালালদের সঙ্গে নিয়ে আমরা কোনো কাজ করব না। অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত একসঙ্গে কাজ করবে এটা তো হয় না। ”

জামায়াত প্রশ্নে তিনি বলেন,”তাদের আমরা রাখব কী না সেটা নিয়ে মঞ্চের ভিতরে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ১৯৯০ সালে তারা যখন শেখ হাসিনার হাত ধরে আন্দোলন করল তখন তো তারা যুদ্ধাপরাধী ছিল না। এখন হঠাৎ তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেল। আগে তো শেখ হাসিনার মুখে কোনো আপত্তি শুনি নাই। আমি যতদূর জানি তারা (জামায়াত) সুষ্ঠু‚ নির্বাচন চায়। সেটার জন্য কাজ করছে। আমাদের একই উদ্দেশ্যে নিয়ে তারা কাজ করছে। মঞ্চে আসতে হবে এমন কোনো কথা নেই তারা কাজ করুক।”

মঞ্চের আরেক শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,”আমাদের দল জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধীদের দল মনে করে। তাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু বর্তমান সরকার জামায়াতের ব্যাপারে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি অনুসরণ করছে। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না।”তিনি বলেন,” আর আমরা মনে করে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক বিচার হয়েছে। তাকে রাজনৈতিক কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমরা এই শাস্তির বিরোধী।”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,”এখন আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করার আন্দোলন করছি। এটাই সবচেয়ে বড় আন্দোলন। হরতাল ঘেরাওয়ের মত কর্মসূচি নিয়ে পরে আমরা ভাববো।তার কথা,”এখন সবাই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমরা বলেছিলাম জোট নয় যুগপৎ আন্দোলন। বিভিন্ন জোট, মঞ্চ ও রাজনৈতিক দল আমরা একই উদ্দেশ্যে একই কর্মসূচি পালন করব। গণতন্ত্র মঞ্চকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা একই জিনিস চাই। আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,” এই সরকারের সাথে যারা আছেন তারা যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক হন তাহলে তাদের নিয়ে আমাদের আপত্তি কেন থাকবে? আসলে ঐক্য হবে রাজপথে।”তিনি আরো বলেন, জামায়াত তো আমাদের সাত দলীয় জোটে আছে।

সম্প্রতি ব্যাপকভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতারা। তাহলে সরকার ও আওয়ামী লীগের সাথে কী তাহলে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,”২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সংসদে বিরোধী দল। সংসদে আমরা সরকারে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছি। এখন মনে করছি সংসদে কথা বলে কাজ হবেনা। তাই আমরা মাঠে নেমেছি। আমরা আরো কর্মসূচি দেব।”

তিনি নতুন গণতন্ত্র মঞ্চকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “তাদের দাবি ঠিকই আছে। সব দলের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ হয়, আমরা যোগাযোগ রাখছি। সরকারি দল ও সরকারের সঙ্গে যেমন কথা হয়, অন্য রাজনৈতি দলের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়। সবার সাথেই আমাদের সম্পর্ক আছে। আমরা তো জনগণের জন্য কাজ করি। আমরা তো জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারি না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ অবশ্য মনে করেন,”জাতীয় পাটি. মহাজোট বা ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক খারাপ হয়নি। তারা সরকারের কাজের সমালোচনা করতেই পারেন। সরকারের কোনো কাজ পছন্দ না হলে তারা সমালোচনা করতেই পারেন। এটাই গণতন্ত্র। দেশে গণতন্ত্রের চর্চা আছে এটাই তার প্রমাণ।”তার কথা,”আমরা জোট আরো শক্তিশালী ও বড় করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আরো অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।”

গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপিসম্পর্কে তিনি বলেন,”এই যে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপি এরা কারা? এদের নেতাদের কেউ কোনো দিন দেখেনি। কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন জনগণের সমর্থন ছাড়া সফল হয় না। এদের এলাকার মানুষই চেনে না। আর বিএনপির নেতা কে? তাদের নেতা তারেক রহমান তো পলাতক, দণ্ডপ্রাপ্ত। তারা আন্দোলন করে সরকারে পতন ঘটিয়ে ফেলবে!” সূএ: ডয়েচে
পরিচয়/এমউএ

শেয়ার করুন