নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়া টাইমস থেকে

বাখমুতেই শেষ হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ?

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বাখমুতেই শেষ হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ?

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি : সৌজন্য

আমেরিকার পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন, রাশিয়া মনে করে- পুতিন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে রাশিয়ার ভূখণ্ডে, বিশেষ করে মস্কো এবং সম্ভবত রাশিয়ার বন্দরগুলোতে আরও বেশি আক্রমণ চালানো হতে পারে।

পেন্টাগন বলেছে, রাশিয়ার ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। তবে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইউক্রেন প্রতিদিনই রাশিয়ার ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে মার্কিন ড্রোন এবং মার্কিন সরবরাহকৃত ক্রুজ মিসাইল ও ক্লাস্টার বোমা ছুড়ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বলছে, তারা ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। কিন্তু কি গোয়েন্দা তথ্য দিচ্ছে সেটার ব্যাখ্যা করতে পারে না। আমেরিকা সরাসরি এটা স্বীকার করতে পারে না যে, মার্কিন গ্লোবাল হক ড্রোন রাশিয়ার ভূখণ্ডে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। এই ড্রোনগুলো সম্ভবত ইউক্রেনকে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ধরনের রাশিয়ান সম্পদকে লক্ষ্যবস্তু করতে সহায়তা করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে, তারা ইউক্রেনকে অনেক নিচ দিয়ে উড়তে সক্ষম কামিকাজি ড্রোন সাপ্লাই দিয়েছিল। যা দিয়ে ইউক্রেন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে সংযোগকারী কের্চ স্ট্রেইট সেতুতে হামলা চালায়। এটি ছিল রাশিয়ার ওপর সরাসরি আক্রমণের শামিল।

পুতিন সরকারের ওপর এ ধরনের অপারেশনের গুরুত্ব রয়েছে। ফলে মস্কো প্রকাশ্যে বিশ্বাস করে– তারা শুধু ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ করছে না বরং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সমগ্র ন্যাটোর সাথে যুদ্ধ করছে।

সুতরাং, পেন্টাগন বা ওয়াশিংটন যা-ই বলুক না কেন, এটাই সত্যি যে, বাইডেন প্রশাসন ইউরোপে একটি বিস্তৃত যুদ্ধের ধারেকাছে চলে যাচ্ছে। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের মীমাংসার সুযোগ কেবল অধরাই হয়ে উঠতে যাচ্ছে তাই নয়, বরং ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি ওয়াশিংটনের লক্ষ্যগুলোই প্রকাশ করছে হয়তো।

আগামী ৫ এবং ৬ আগস্ট, সৌদি আরব ইউক্রেনের মাটিতে একটি তথাকথিত শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যেখানে ইরানসহ প্রায় ৩০টি দেশ অংশ নেবে। কিন্তু রাশিয়াকে এই সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে– এই শান্তি সম্মেলন গুরুতর নয়, বরং এটি একটি প্রচারমূলক অনুষ্ঠান মাত্র।

আজ হোক বা কাল, সম্ভবত খুব শিগগিরই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের একটি নিষ্ফল সমাধান মেনে নেবে এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে। অথবা রাশিয়া তার মিত্র দেশগুলোকেও এই যুদ্ধের মধ্যে টেনে আনবে। যার ফল হবে আরও ভয়ঙ্কর।

রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তাহলে রাশিয়ান সরকারের পতন হবে। আর যদি রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যায় তবে কট্টরপন্থি জাতীয়তাবাদী দলের একটি বড় বিজয় ঘটবে এবং তারা রাশিয়াকে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে দিতে উৎসাহিত করবে।

সেই মুহূর্তে, পুতিনকে হয়তো তার সরকারের মধ্যে সংস্কার করতে হবে অথবা ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পুতিন পদত্যাগ করলে, তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষেবা এবং সামরিক বাহিনী থেকে অনেক প্রার্থী এগিয়ে আসবে। কিন্তু সম্ভবত দুর্বল বাম থেকে নয় বরং ক্ষমতায় বসবে কঠোর জাতীয়তাবাদী ডান থেকে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কতটা স্থিতিস্থাপক তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধে, ডনবাস এবং দক্ষিণ জাপোরিঝিয়া এলাকায় উভয় পক্ষই অবিরাম যুদ্ধে আবদ্ধ বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকাশিত প্রমাণ থেকে বিচার করলে, ইউক্রেনীয়রা অনেক সরঞ্জাম ও জনবল হারিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু দাবি করেছেন, শুধু জুলাই মাসে ইউক্রেন ২০ হাজার সেনা হারিয়েছে।

তবে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা অনেক কঠিন। রাশিয়া যদি যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাহলে প্রশ্ন উঠছে, ইউক্রেন কতদিন এই যুদ্ধে সেনা সাপ্লাই দিতে পারবে।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সরাসরি সাহায্যে যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি করতে পেরেছে ইউক্রেন। তারা দক্ষিণে রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষামূলক লাইন ভেঙে দেওয়ার আশা করছে। পাশাপাশি বাখমুতের চারপাশের বসতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করার আশা করছে ইউক্রেন এবং জেলেনস্কি বখমুত ফিরে পাওয়ারও আশা করছে।

জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য থেকে নতুনভাবে সহায়তা এবং যে উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন তাতে তিনি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। বাখমুতে যা ঘটছে তা ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারে, হয় ইউক্রেনের বিজয় বা রাশিয়ার জয়।

রাশিয়া জয়ী হলে ইউক্রেনকে মীমাংসার জন্য রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে হতে পারে। ইউক্রেন জিতলে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেন থেকে তার কিছু বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে এবং দক্ষিণে ক্রিমিয়া এমনকি ক্রিমিয়ারও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

রাশিয়ার সামনেও একটি বিপজ্জনক বিকল্প রয়েছে। সেটি হলো– মস্কো ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের বাইরে ছড়িয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- পোল্যান্ড বা বাল্টিক রাজ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে পারে রাশিয়া। যদিও পুতিন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি কোনোভাবে যুদ্ধ সম্প্রসারণের পক্ষপাতী নন। কিন্তু পুতিন আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার দিকে ঝুঁকবেন না তার নিশ্চয়তা কে দিতে পারে?

যুদ্ধ বেশিদিন সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার শাসন পরিবর্তন নিয়ে জুয়া খেলছে। তবে তারা যা চায়, তা তারা নাও পেতে পারে। রাশিয়ার শাসন পরিবর্তন ন্যাটোর জন্য একটি তিক্ত পথ্য হতে পারে।

রাশিয়া ইউক্রেনে বিরাজ করার জন্য জুয়া খেলছে। কিন্তু এটি একটি কঠিন লড়াই এবং অনেক দিন ধরেই তা চলমান রয়েছে। মোট কথা– দু’পক্ষের সামনেই বাজির টেবিল খোলা। মূল – স্টিফেন ব্রায়েন (STEPHEN BRYEN) ভাষান্তর – মুজাহিদুল ইসলাম সূত্র : কালবেলা

শেয়ার করুন