নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচনে জায়েদা খাতুনের বাজিমাত

বাইডেন ভ্যাকসিনে গণতন্ত্রের বারতা

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩ | ১১:৩৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ | ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বাইডেন ভ্যাকসিনে গণতন্ত্রের বারতা

বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় প্রায় ১২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ‘উপহার’ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে অদৃশ্য ভাইরাস থেকে রক্ষা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাংলাদেশের মানুষের শরীরে যতগুলো করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে তার একতৃতীয়াংশ ভ্যাকসিন বিনে পয়সায় দিয়েছেন জো বাইডেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে রক্ষার পর এখন মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংঘাত, রক্তারক্তি থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই ‘ভিসা নীতি’ কার্যত দেশের রাজনীতিতে করোনার ভ্যাকসিনের মতো ‘ক্রিয়া’ শুরু করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের ‘ভিসা নীতি’ কার্যত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বারোতা নিয়ে এসেছে। তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কয়েকটি উপ-নির্বাচন ছাড়াও উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে চিত্র দেখা গেছে তা থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দৃশ্য ছিল ভিন্ন। নৌকার প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না এতোদিন ‘চিরায়ত প্রথা’ চালু হয়েছিল তা গাজিপুর নির্বাচনে ভেঙ্গে গেছে।

এই সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ নির্বিঘ্নে প্রশাসনের সহায়তায় নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও প্রতিপক্ষ ‘টেবিল ঘড়ি’ মার্কার প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভোটের আগের রাতে ‘বাইডেন ভ্যাকসিন’ মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। যারা নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকের প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ কর্ণপাত করেননি; তারা নড়েচড়ে বসেন। ফলে স্থানীয় এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে ‘বাজিমাত’ করেন ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রার্থী গৃহবধু জায়েদা খাতুন। নির্বাচিত হওয়ার পর জায়েদা খাতুন বলেছেন, পুত্র সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের উপর ক্ষমতাসীনদের অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই বিজয়ী হয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। আগামীতে আরো চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন একইভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে’। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করার সকল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে অবস্থান নিয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের নাগকিরদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ‘শান্তির বারতা’ নিয়ে এসেছে। এর তাৎক্ষণিক প্রমান যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা একে অপরকে মুখ দেখাদেখি করেন না তারা দ্রুত ছুটে যান ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায়। জাতীয় সংসদে ‘নাচের পুুতুল’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা ছুটে যান নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে। সবাই এক টেবিলে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপির ‘পথ যাত্রা’ ঠেকাতে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশ’ এবং বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রহরার ‘চেতনা’ পাল্টে যায়। মূলত গাজীপুর নির্বাচনে জো বাইডেনের ‘ভিসা নীতি’ ভ্যাকসিনের মতো কাজ করেছে। স্থানীয় এই নির্বাচনের দিন নির্বাচন কমিশন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন তথা ডিসি-এসপি কেউ জোর করে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ‘ক্যারিকেচা’ কৌশল করেননি। তারা মার্কিন নতুন ‘ভিসা নীতি’র আশঙ্কা থেকেই সংযমী হয়েছেন। অথচ অন্য সব নির্বাচনে দেখা গেছে তারা সম্মিলিতি ভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীতে জিতিয়ে আনার মহাপরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামেন। গাজীপুর সিটির নির্বাচনে দিনে ভোটের সময় কয়েকটি কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোট গণনার সময় হঠাৎ করে কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ধারাবাহিক প্রকাশ দুই ঘন্টা বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু বাইডেন ভ্যাকসিনের ভয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মতো গাজীপুরে ফলাফল ‘পাল্টে দেয়া’র ঝুঁকি কর্মকর্তারা নেননি। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক ছাক্কুর টেবিল ঘড়ি সবকটি কেন্দ্রের ফলাফলে প্রায় ৫শ ভোটে এগিয়ে থাকলেও হঠাৎ করে ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতপর রাতের শেষ দিকে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের হাতি মার্কা যে সব সেন্টারে বেশি ভোট পাবেন ধারণা করা হয়েছিল সেই সব কেন্দ্রে নষ্ট ইভিএম নেয়া হয়; কোনো কোনো কেন্দ্রে ধীর গতিতে ভোট নেয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়। ফলে অনেক বুথে ইভিএম মেশিনে সারাদিন ৩০ থেকে ৫০টির বেশি ভোট গ্রহণ সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ডা. সেলিনা হায়াত আইভির নৌকা প্রতীকের প্রচুর ভোট গ্রহণ করা হয়। ফলাফল যা হবার তাই হয়। কিন্তু গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গণনা অজ্ঞাত কারণে দুই ঘন্টা বন্ধ রাখলেও কারচুপি করে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহকে জিতিয়ে দেয়ার ঝুঁকি রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নেননি। কারণ ওই বাইডেনের ‘ভিসা নীতি’ ভীতি। অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের নতুন ‘ভিসা নীতি’ ঘোষণার পর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, ‘যে চার কাজের কারণে ভিসা দেওয়া হবে না, সেগুলো হচ্ছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারচর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকা-’। আর ‘ভিসা নীতি কার্যকর হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তাদের ওপর। ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথুউ মিলার বলেছেন, নতুন ভিসা নীতি হলো বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি ‘সিগন্যাল’ যে আমরা কেবল অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা সমর্থন করব। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত (রেডি টু টেক অ্যাকশন)। ফলে গাজীপুরে যারা ভোট গ্রহণ, আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তারা কেউ ভবিষ্যতের কথা ভেবে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ফলাফল পাল্টে দেয়ার ঝুঁকি নেননি। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ (নৌকা) পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আতিকুল ইসলাম (মাছ মার্কা) ১৬৯৭৪ ভোট; এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল) ১৬৩৬২; গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা) ৪৫৩৫২; মো. রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল) ৭২০৬; মো. হারুন-অর-রশিদ (ঘোড়া) ২৪২৬ এবং সরকার শাহনূর ইসলাম (হাতি) ২৩২৬৫ ভোট পেয়েছেন।

বাংলাদেশে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার আগে নির্বাচনে ভোট কারচুপি, সহিংসতা, জনগণকে ভোট দানে বাধাদান ইত্যাদি অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আরো কয়েকটি দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন বোলা আহমেদ তিনিবু। ওই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে গত ১৬ মে কয়েকজন নাইজেরিয়ানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সোমালিয়ার গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করা, বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে ২০২২ সালে সোমালিয়ার সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আফ্রিকার আরেক দেশ উগান্ডায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে জয় পান ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইউয়েরি মুসেভেনি। ওই নির্বাচনে কারচুপির দায়ে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি করে চতুর্থ দফায় প্রেসিডেন্ট হন ড্যানিয়েল ওরতেগা। ওই নির্বাচনে কারচুপি এবং এতে সহায়তা করার অভিযোগে বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে ইউরোপের দেশ বেলারুশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে কারচুপি ও পরে বিরোধী দলের বিক্ষোভে দমন-নিপীড়নের অভিযোগে দেশটির ৮ নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়াও নারীদের কাজ করার অধিকার খর্ব করায় আফগানিস্তান, বিক্ষোভকারীদের দমন-নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমার এবং অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পাকিস্তানের কয়েকজনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এই কঠোর সিদ্ধান্ত দেখে গাজীপুর সিটির নির্বাচনে বাড়াবাড়ি করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে অ্যান্থনি ব্লিঙ্গেন ঘোষণা দিয়েছেন যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এতে করে আওয়ামী লীগের নেতা এবং কয়েকজন মন্ত্রী মুখে যাই বলুক না কেন সাবেক ও বর্তমান প্রশাসনে কর্মরত আমলা, আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বশীল এবং বিতর্কিত কর্মকর্তা, বিচারকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শুরু হয়ে গেছে। গাজীপুর নির্বাচনে তারা কেউ ‘নৌকা’ বিজয়ী করতে কোনো কূটকৌশল গ্রহণ করেননি। কারণ নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, উগা-া, নিকারাগুয়ায় ‘নির্বাচনে কারচুপি’ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়া কর্মকর্তাদের ভাগ্যবরণ করতে চাচ্ছেন না। মার্কিন ভিসা নীতিতে এটাও বলা হয়েছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করবে এবং তাদের আদেশ-নির্দেশে বাধাগ্রস্থ হবে তাদের সবার জন্য এই নীতি প্রযোজ্য হবে। ফলে যাদের ভিসা রয়েছে তারাও অভিযুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির আওতায় পড়ে যাবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সবার জন্যই সতর্কবার্তা’। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটাই কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের অবশ্যই প্রতিহত করব। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সরকার এমন কিছুই করবে না, যাতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।’

জো বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তর গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যে ‘নতুন ভিসা নীতি’ ঘোষণা করেছে, তা কূটনৈতিক রাখঢাক না করে পরিস্কার বলা হয়েছে। চীনকে ঠেকাতে মার্কিন অবস্থান বা ভবিষ্যতে যে উদ্দেশ্যেই হোক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতিতে বলেছেন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে’ এই নতুন নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে মার্কিন উদ্যোগকে সমর্থন করা উচিত। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার প্রয়োজনে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যে আমলা, আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী, নিম্ন
আদালতের বিচারক, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা এতোদিন ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের খুশি রাখতে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন, মার্কিন নতুন ভিসা নীতিই হয়তো এখন তাদের বিবেক জাগ্রত করবে। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

শেয়ার করুন