নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সম্ভাব্য নির্বাচনকালীন সরকারে ছাড় দেবে না কেউই

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩ | ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ | ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশের সম্ভাব্য নির্বাচনকালীন সরকারে ছাড় দেবে না কেউই

আওয়ামী লীগ বলছে আগামী নির্বাচন তাদের অধীনেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আগামী নির্বাচনের সময় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। যদিও এই সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় সেই সরকারে এই দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গে ও তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এই সরকারকে হটাতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। দলের নেতারা বলছেন, সরকার হটানোর জন্য এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসছে শিগগিরই। যুগপৎ আন্দোলনে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো সেই এক দফা আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি।

এদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় আছেন। ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি নির্দলীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিতে দলটি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ দেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলটি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আবারও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু দলটির। এখনো এই দাবিতে রাজপথে আছে তারা। বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের সময় শেষ। প্রয়োজনে জনগণকে নিয়েই কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এক বছর ধরে সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। বিএনপির দলীয় একটি সূত্র জানায়, সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা শিগগিরই আসছে। এখন এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বর্তমানে চলমান কর্মসূচিগুলো সেই এক দফা আন্দোলনের আগে প্রস্তুতি পর্ব। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। নির্বাচনকে ঘিরে কেউ অশান্তির পরিবেশ তৈরি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। দেশের এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা কোনো অবস্থাতেই রাজনীতির মাঠ ছাড়তে নারাজ। এই দুই দলের বর্তমানে মূল বিরোধের জায়গা হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর বিএনপি বলছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দল দুটি অবস্থানে অনড় থেকেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া অব্যাহত রেখেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজনীতির মাঠে আছি। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠেই থাকবে। কেউ অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’ বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন নয় বলে জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশে কিছু উষ্ণতা আবির্ভূত হয়। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী উৎসবে অবাঞ্ছিত উষ্ণতা হারিয়ে যায়। কিন্তু কতিপয় দেশ ও গণতন্ত্রবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কিছু কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের কাছে মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব চক্রান্ত মোকাবিলা করবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে তার আশা।

আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘পুরোনো ও বড় রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতি না থাকার কারণে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার ও দল এক হয়ে গেছে। এত বড় রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই। রাজনীতির মাঠে গুন্ডামি, সন্ত্রাস করে বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকছে। যেহেতু তারা আদর্শচ্যুত হয়েছে, এ কারণেই তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে।’ বড় দুই নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। আর গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির মহাসচিব হচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ‍দুই দলের দুই বড় নেতা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে রাজনীতির মাঠের আলোচনায় আছেন। গত ২০ মে থেকে গতকাল ৩ জুন পর্যন্ত- এই ১৫ দিনে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, এই সময়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপি ও মির্জা ফখরুলকে সমালোচনা করে ১৬ বার গণমাধ্যমে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছেন। একই সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ বার আওয়ামী লীগ, ওবায়দুল কাদের ও সরকারকে সমালোচনা বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে উত্তর-ঔপনিবেশিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির (পোস্ট কলোনিয়াল ডেমোক্রেসি) ধারা চলছে, এটি বেশ গোলমেলে (নয়জি)। দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নেতাদের এমন বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের ঘটনা স্বাভাবিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘যারা ভাবেন, রাজনীতি ভদ্রলোকদের, আমি তাদের দলে নই। রাজনীতির মাঠে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য চলবেই। তবে যখন বক্তব্য শালীনতা অতিক্রম করে, হুমকির পর্যায়ে চলে যায়, তখন আমাদের কথা বলতেই হবে।’ শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘সারা বিশ্বেই রাজনীতিবিদরা একটু উচ্চকিত ভঙ্গিতে কথা বলেন। এটি দূষণীয় কিছু নয়। নির্বাচনের বছরে রাজনীতিবিদদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য হবেই।‍ কে কতবার বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য দিল, এই মাথাব্যথার চেয়ে প্রত্যেকের উচিত দল-মত-রাজনীতিনির্বিশেষে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণে আরও মনোযোগী হওয়া।’

যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়নি : সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানালেও যৌথ ঘোষণাপত্রের রূপরেখা নিয়ে একমত হতে পারেননি বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। গত পাঁচ মাসে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা একাধিকবার বৈঠক করেও সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে পারেননি। যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর মত হচ্ছে, দেশে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রকাঠামোয় গুণগত পরিবর্তন দরকার। বিশেষ করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার পরিবর্তন দরকার। বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি বিষয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে ভিন্ন মত আছে। বিষয়গুলো হলো- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম।

এক দফা আন্দোলন ও যৌথ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। খুব শিগগির এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। কারণ, এই সরকারের আর সময় নেই। জনগণ অস্থির ও কাহিল হয়ে আছে। তারা ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে চায়। যদি প্রয়োজন হয় জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাব। তবে সেটি সময় ও পরিস্থিতিই বলে দেবে।’- সুত্র দৈনিক বাংলা

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন