নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তান চোরাবালিতে আটকে গেছে: ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:২১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:২১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পাকিস্তান চোরাবালিতে আটকে গেছে: ইমরান খান

পাকিস্তান চোরাবালিতে আটকা পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আর এখান থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র উপায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বলেও দাবি করেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসি উর্দুর সংবাদদাতা উসমান জাহিদকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ইমরান খান মনে করেন, আগামী এপ্রিলে দেশটির বর্তমান সরকার আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেছেন, নতুন সামরিক প্রধানের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, এই সরকার কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। বরং তারা নিলামের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তাই সরকারের সাথে কথা বলতেও রাজি নন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সংসদ সদস্যদের কেনা-বেচার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি ২০-২৫ কোটি রূপি দিয়ে এমপিদের ভোট ক্রয় করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এক্ষেত্রে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া শাহবাজ শরীফকে সমর্থন জুগিয়েছেন বলেও উল্লেখ করে ইমরান খান।

বাজওয়ার বিরুদ্ধে ১১০০ বিলিয়ন রূপি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে- একথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি ডুবে গেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এখান থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র উপায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্যথায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

পাকিস্তানের কিছু রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ আগামী আগস্ট মাসে সাধারণ নির্বাচন চায়। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা বারবার ঘোষণা করেছেন যে পার্লামেন্ট তার মেয়াদ শেষ করবে এবং অক্টোবরে নতুন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ইমরান খান বলেন, বর্তমান সরকারের সাথে সম্পৃক্ত মানুষজন আইনের শাসনকে ভুলুণ্ঠিত করেছে। তারা নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে রেখেছে। নিজেদের করা সব চুরি ও দুর্নীতি মাফ করে দিয়েছে।

শাহবাজ, নওয়াজ, জারদারি, মরিয়ম – সবাই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। তো এর চাইতে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? যতো সময় যাবে, তাদের উদ্দেশ্য নিজেদের বিরুদ্ধে মামলা শেষ করা।

বিবিসির সাংবাদিককে ইমরান খান বলেন, এই মুহূর্তে দুই মাস অনেক দূরে মনে হতে পারে। আপনি আগস্টের কথা বলছেন। কিন্তু আমি এখনকার কথা বলছি। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রিজার্ভ আছে মাত্র চার বিলিযন ডলার।

তিনি বলেন, বন্দরে পণ্য পড়ে আছে কিন্তু খালাস করা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় এই সরকার আরো দুই মাস কিভাবে পাড় করবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন ইমরান খান। তার ধারণা, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সরকার এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হবে কারণ ঠিক এক বছর আগে, একই মাসে, পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছিল।

এদিকে সাধারণ মানুষের মতামত হল, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সরকার অর্থনৈতিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এবং কিছু পর্যবেক্ষক দাবি করেছেন যে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রচারণা এই অস্থিতিশীলতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

জবাবে ইমরান খান বলেন, গত ১৭ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে তার সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। কেউ তাকে (সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া) জিজ্ঞেস করুক – কেন তিনি আমাদের সরকারকে উৎখাত করলেন?

ইমরান খান প্রশ্ন তোলেন, তার সরকার কী এমন ভুল করেছিলে যে তাদের টেনে নামানো হলো? তিনি বলেন, আমি এবং শওকত তারিন (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) একসাথে জেনারেল বাজওয়াকে বলেছিলাম, আপনি যদি এই ষড়যন্ত্র সফল করতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন, তবে দেশের অর্থনীতি কেউ সামলাতে পারবে না। আর সেটাই হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকারের পতন ঘটানোর পরে বাজারে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছে। দেশে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেছে। কারণ যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কোন রোডম্যাপ নেই। ইমরান খান বলেন, জেনারেল বাজওয়া তাদের সাথে মিলে যা করেছে, কোন শত্রুও পাকিস্তানের সাথে তা করতে পারেনি।

ইমরান খানকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসীম মুনিরের সাথে তিনি এবং তার দলের সম্পর্ক কেমন? জবাবে তিনি বলেন, দেখুন, এখন আমাদের সাথে নতুন সামরিক নেতৃত্বের কোন সম্পর্ক নেই।

তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান হিসেবে, ইমরান খান স্বীকার করেছেন যে তিনি অনেক বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, কিন্তু তালেবানের সাথে আলোচনার বিষয়ে তার অবস্থান কমবেশি একই নীতিতে রয়ে গেছে। আর তা হল, শান্তি, আলোচনা এবং পুনর্বাসন।

শেয়ার করুন