নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০২:৪২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০২:৫২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারত

বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির নিজস্ব ব্যাপার উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে। তিনি এও বলেছেন, তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। নয়াদিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বর্তমানে ভারত সফরে আছেন। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) তারা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।

দুই দেশের মন্ত্রীদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রা বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষই বাংলাদেশের বিষয়ে স্পষ্টভাবে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছি। মার্কিন মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করি তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, এই আলোচনায় বাংলাদেশের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। আমি মনে করি বাংলাদেশের উন্নয়ন বা নির্বাচনের কথা যখন আসে, তখন এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার। সে হিসেবে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং দেশটির জনগণ নিজেদের জন্য যে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল অবস্থা আশা করে, আমরা তাদের সে লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়ে যাব।’

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে দেশটি।

দিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২+২) আলোচনায় প্রত্যাশিতভাবে উঠে এল নির্বাচনমুখী বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বৈঠকে ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চিন্তাভাবনার কথা আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

দুই দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গের অবতারণার কথা আজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে জানালেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানান, ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি যথেষ্ট চাপও সৃষ্টি করে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক হোক। এই নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশের জন্য তাদের নতুন ভিসা নীতিও ঘোষণা করে। বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্র করে তারা যথেষ্ট সক্রিয়ও।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই সক্রিয়তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা। কারণ, ভারত মনে করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে, যা ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ব্যাখ্যা ভারত আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে জানিয়েছে। আজ শুক্রবারের বৈঠকেও তা নতুন করে জানানো হলো।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব কোয়াত্রাকে সরাসরি এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের অবস্থানের কথা পরিষ্কারভাবে আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যত্র আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের মনোভাবের কথা ওদের (যুক্তরাষ্ট্র) স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।’

সেই ধারণা কী, বিনয় কোয়াত্রা তা-ও জানাতে দ্বিধা করেননি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবেন। তাঁরাই তাঁদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

ভারতের এই মনোভাবের কথা গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়েও জানিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। কিন্তু একই কথা ২+২ বৈঠকের পর জানানোর অর্থ, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে ভারত এখনো সহমত নয়।

পাশাপাশি ভারত আরেকবার বুঝিয়ে দিল, নির্বাচনমুখী বাংলাদেশের পাশে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রকেও শুক্রবার সেই বার্তা আরেকবার দেওয়া হলো।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কেমন ছিল, সে ব্যাপারে কোনো আভাস অবশ্য পররাষ্ট্রসচিব দেননি। তিনি শুধু বলেন, তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য ভারত সমীচীন মনে করে না।

বৈঠকে কানাডা প্রসঙ্গও এসেছে। সে দেশে খালিস্তানপন্থীদের তৎপরতা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায় ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিনয় কোয়াত্রা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি সরাসরি জানিয়েছি।’

কানাডায় সম্প্রতি ভারতবিরোধী একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তা ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা, কানাডার সরকারের প্রশ্রয় নিয়ে ভারত তার উদ্বেগের কথা আগেও জানিয়েছে। আজকের বৈঠকেও তা নতুনভাবে তুলে ধরা হয়। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দাবি মেনে নিজ্জর হত্যা তদন্তে ভারত সহায়তা করতে রাজি কি না, সেই প্রশ্নের জবাব বিনয় কোয়াত্রা দেননি।

শেয়ার করুন