নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু বাঁচাতে সৌরবিদ্যুৎ গলার কাঁটা হতে পারে পৃথিবীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৩ | ০১:১২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ | ০১:১২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
জলবায়ু বাঁচাতে সৌরবিদ্যুৎ গলার কাঁটা হতে পারে পৃথিবীর

বর্তমানে পৃথিবীতে ১ টেট্রাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আসছে সৌর প্যানেল থেকে। ছবি: সংগৃহীত

বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভবিষ্যতে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হবে সৌরবিদ্যুৎ। দেশে দেশে এর ব্যবহার বাড়লে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমবে। জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও কমে আসবে।

কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝামেলাও দেখতে পাচ্ছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ সৌর প্যানেল বসানো হচ্ছে। এসব প্যানেল ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই অকেজো হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, একটি নির্দিষ্ট সময় পর কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই কয়েক শ কোটি সৌর প্যানেল পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সোলার প্যানেল বিশেষজ্ঞ ড. রং ড্যাং জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এক টেট্রাওয়াটের (১ টেট্রাওয়াট = ১০ লাখ মেগাওয়াট) বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। একটি গড়পড়তা প্যানেল দিয়ে ৪০০ ওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এ হিসাবে বর্তমানে পৃথিবীতে আড়াই শ কোটিরও বেশি সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে।

গবেষকেরা হিসেব করে দেখেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যেই বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন সব সৌর প্যানেলই অকেজো হয়ে যাবে এবং এগুলোর বিকল্প প্যানেল বসাতে হবে। কিন্তু বিপুলসংখ্যক পরিত্যক্ত প্যানেলই একসময় পৃথিবীর গলার কাঁটা হতে পারে। পরিবেশের জন্য ডেকে আনতে পারে মহাবিপর্যয়। এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েল এনার্জি এজেন্সির উপপরিচালক ইউটে কোলার বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যেই আবর্জনার পাহাড় সৃষ্টি হবে, যদি না বাতিল হয়ে যাওয়া প্যানেলগুলোকে আমরা পুনরায় ব্যবহারের উপায় বের করতে না পারি।’

এদিকে আশা করা হচ্ছে, বাতিল হয়ে যাওয়া সৌর প্যানেলগুলোকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে ফ্রান্সে একটি কারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। ফ্রান্সের অ্যালপাইন শহরে অবস্থিত ‘রোসি’ নামের ওই কারখানাটি আশা করছে-তারা একটি সৌর প্যানেলের ৯৯ শতাংশই পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে একেকটি সৌর প্যানেল থেকে কাচের স্তর এবং অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমগুলো পুনর্ব্যবহার করার পাশাপাশি, প্যানেলের মধ্যে থাকা প্রায় সমস্ত মূল্যবান উপাদান পুনরুদ্ধারে কাজ করবে কারখানাটি। এমনও হতে পারে ওই উপকরণগুলো দিয়ে ভবিষ্যতে নতুন এবং আরও শক্তিশালী সৌর ইউনিট তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, সৌর প্যানেল পুনর্ব্যবহার করার প্রচলিত পদ্ধতিতে উদ্ধার করা কাচ তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের হয়। ফলে যেসব ক্ষেত্রে উচ্চ মানের কাচের প্রয়োজন হয়, সেগুলোতে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এসব কাচ দিয়ে টাইলস কিংবা স্যান্ডব্লাস্টিং গ্লাস তৈরি করা যেতে পারে।

কিন্তু ফ্রান্সের ওই কারখানা দিয়ে তো সারা বিশ্বের সব সৌর প্যানেল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসা-বাড়িতে ব্যবহার করা প্রথম জেনারেশনের সৌর প্যানেলগুলো ইতিমধ্যেই অবসরে যাচ্ছে। তাই বিশ্বজুড়ে এগুলোর পুনর্ব্যবহারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ইউনিটগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে খরচ কমানোরও একটি বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে মিস ইউটে কলার বলেন, ‘এটা নিয়ে ভাবার এখনই সময়।’

শেয়ার করুন