নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্যোগ

কঠোর অবস্থানে বিএনপি

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩ | ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ | ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কঠোর অবস্থানে বিএনপি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এজন্য এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলটির যেসব নেতা উপ-নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার, এটিএম কামাল, কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ বিগত এক বছরে শতাধিক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন, বিএনপির এখন মূখ্য ও একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়। এই দাবিতে দল যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোন ইস্যুতে মনোযোগ দিতে চায় না হাইকমান্ড। এজন্য পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের কাউকে প্রার্থী না হতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজশাহী, গাজীপুর ও সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন, এ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না-এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সুতরাং মেয়র বা কাউন্সিলর পদে যাতে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ না নেন; সে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে না পারলে মহানগর নেতাদের এর দায় নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনেরও তাগিদ দেন তিনি। একইসঙ্গে দলের নির্দেশনা যারা মেনে নিবেন তাদেরকে আগামী দিনে নতুন কমিটিতে মূল্যায়ণ করা হবে। আর যারা অম্যান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

যার সর্বশেষটি দেখা গেছে গাজীপুরে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ২৯ নেতা কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের সবাইকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাঁরা কাউন্সিলর হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলেও সংশ্লিষ্ট নেতারা কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে বরং নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত রয়েছেন। দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৯ নেতাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি মজিবর সরকার, সদস্য মাহবুবুর রশিদ খান, সবদের আহাম্মদ, খায়রুল আলম, জিএস মনির, শহিদুল ইসলাম, তানভির আহমেদ, শাহিন আলম, আনোয়ার সরকার, রফিকুল ইসলাম, যুবদলের আহ্বায়ক হাসান আজমল ভূঁইয়া, বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়া, বাসন থানার সাধারণ সম্পাদক মোছলেম উদ্দিন, টঙ্গী পূর্ব থানার সাধারণ সম্পাদক সফিউদ্দিন আহম্মেদ, মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার, পুবাইল থানা বিএনপির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম, সাবেক আহ্বায়ক সুলতান উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য আবুল হাশেম, সাবেক সদস্য ফারুক হোসেন খান, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির সদস্য সেলিম হোসেন, মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার নুরুন্নাহার, কেয়া শারমিন, সদস্য ফিরোজা বেগম, টঙ্গী পূর্ব থানা মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিনা মমতাজ, ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আলম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আউয়াল সরকার, গাছা থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন ও টঙ্গী পশ্চিম থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৩০ জন নেতা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। বাকী ২৯ জনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না। দল এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনার প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সেসব সিটি করপোরেশনেরও যদি বিএনপির কোন নেতা প্রার্থী হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তার আগে সকলকেই সতর্ক করা হয়েছে। এজন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন। সিটি নির্বাচনে বিরত থাকা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নির্দেশ উপেক্ষা করায় সিলেট মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, দলের কঠোর নির্দেশনা আমরা মৌখিকভাবে বারবার বলেছি। কেন্দ্রকেও জানিয়েছি। এরপরও যারা নির্বাচনে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তালিকা অনুসারে গত শনিবার চূড়ান্ত নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। রাজশাহী বিএনপির নেতারা জানান, যেকোনো উপায়ে সিটি নির্বাচন থেকে দলের নেতাদের বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাদের তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেন। সম্ভাব্য নেতাদের প্রয়োজনে দলের বিভিন্ন শাখায় নতুন পদ দেওয়ার কৌশল নিতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ইশা বলেন, দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে সরে আসতে বলছি। তবে যারা ভোটে নেমেছেন তাদের অনেকেরই বিএনপিতে এখন আর পদ-পদবি নেই।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়না সেটি নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। এই সরকারের অধীনে বিএনপি যেসব নির্বাচন অংশ নিয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই হয় দিনের ভোট আগে রাতে হয়ে গেছে, নাহলে নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে, প্রার্থীদের প্রচারণা চালাতে দেয়নি, ভোটারদের হুমকী-ধামকী দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের ভোট ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা দিয়েছে- এমন চিত্রই ছিল। তাই বিএনপি এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না।

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করবার যে সিদ্ধান্ত ইতিপূর্বে গ্রহণ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নের লক্ষে এই সরকারের অধিনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোটারদের অংশ গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এই সরকারের অধিনে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না বিধায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও একই ভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত হবে। এতে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। বিএনপি এই অর্থহীন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে দলের নির্দেশনা অমান্য করে গতবছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার এবং তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত ডিসেম্বরে সংসদ থেকে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করার পর পুনরায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকেও বহিষ্কার করে বিএনপি। কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশ নেয়ায় শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন