নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ০২:২৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ | ০২:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল৷ তিনি পর পর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন৷ সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই৷

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী নিয়ে ভাবছে৷ আর সংসদে অন্য কোনো দল প্রার্থী দেবে এমন কোনো আলোচনা নেই৷ আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি৷

সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক তার জীবনে দুইবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন৷ এটা পর পর বা যে কোনো সময়ে৷ দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই৷ আবদুল হামিদকে ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান সংশোধন করার কোনো ইচ্ছা এই সরকারের নাই৷ তারা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য লোক খুঁজছেন৷

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর৷ এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন৷ আর তার উত্তরসূরী দায়িত্ব না পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন৷

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি : সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে৷ তারাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷ রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে৷ তবে, যে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে, ওই সংসদের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না৷ আর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷

রাষ্ট্রপদি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয়না৷ তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক লাগে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন৷

সংবিধানের ৪৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-

(ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা

(খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন; অথবা

(গ) কখনো সংবিধানের অধীন অভিশংসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ হতে অপসারিত হয়ে থাকেন৷

আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনে দল প্রার্থী দেবেনা : জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি৷ আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬, বিএনপির সাত জন পদত্যাগ করায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, গণফোরামের দুইটি এবং স্বতন্ত্র তিনটি আসন৷ সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্রদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ আছে৷ এ বিষয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী দিয়ে কী লাভ? সংসদে আমাদের ভোট আছে দুইটি৷ এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই৷ প্রার্থী দেয়ার জন্য প্রার্থী দেয়ার কোনো মানে হয়না৷”

জাতীয় পার্টিও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবেনা বলে জানা গেছে৷

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘এখানে সংসদে অন্যদল প্রার্থী দিয়ে কী করবে? গোপন ব্যালটে ভোট হলেও তো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফ্লোর ক্রসিংয়ের কোনো সুযোগ নেই৷”

রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্ব : বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তার তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নাই৷ এটা একটি অলংকারিক পদ৷ তিনি সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই কাজ করবেন৷ সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করতে বাধ্য নন৷

মোকাব্বির খান বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা জরুরি৷ সাবেক রাষ্ট্রপতিরাই তো বলেছেন রাষ্ট্রপতির মাজার জিয়ারত ছাড়া কোনো কাজ নাই৷”

তার কথা, ‘‘সংবিধান সংশোধন করে শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনাই যথেষ্ঠ নয়৷ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদও একজনের জন্য সর্বোচ্চ দুইবার করা উচিত৷”

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভরসাম্য এবং প্রধানমন্ত্রীও দুই মেয়াদের বেশি নয়- এই আলোচনা অনেক দিনের৷

কিন্তু করবে কে?” : কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে৷ আর সংবিধানও সংশোধন করা হবেনা৷ ফলে আবদুল হামিদের পর নতুন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ৷ এরইমধ্যে নানা সূত্রের বরাত দিয়ে সম্ভাব্য বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় থাকার কথা বলা হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুসহ আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে৷

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কে হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী এটা প্রধামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এটা নিয়ে অন্য কারোর কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই৷ কেউ মন্তব্য করতে রাজিও হননি৷

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্পিকার হিসেবে দুই বার দায়িত্ব পালন করেন৷ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

শেয়ার করুন