নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে জামালপুরে সাংবাদিক হত্যা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩ | ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ | ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে জামালপুরে সাংবাদিক হত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মাহমুদুল আলম বাবু পলাতক। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছয় সহযোগীকে আটক করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ তাকেও খুঁজছে। তবে এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

নিহত সাংবাদিকের পরিবার, স্থানীয় সাংবাদিক এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি খবর প্রকাশের জের ধরে প্রথমে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। সেই মামলা আদালত খারিজ করে দেয়ার পর তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় গুরুতর আহত গোলাম রাব্বানী নাদিম পরে হাসপাতালে মারা যান৷ ১৪ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ পৌরসভার পাটহাটি এলাকায় গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলা চালানো হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ১৫ জুন বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান। বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং একাত্তর টেলিভিশনের বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ছিলেন।

তার মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ” ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী তার সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করে প্রায় এক মাস আগে সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের খবর আমার বাবা বাংলানিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমে প্রকাশ করেন। তিনি ছাড়া আর কেউ এই খবর দেননি। খবর প্রকাশের পর থেকেই আমার বাবাকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। চেয়ারম্যান প্রকশ্যে আমার বাবাকে হত্যারও হুমকি দেয়। ‘ওই সাংবাদিককে নাই করে দেয়া ১০ মিনিটের ব্যাপার’ বলেও তিনি হুমকি দেন।” তিনি বলেন, ” ওই চেয়ারম্যান খবর প্রকাশের পর আমার বাবার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ১৪ জুন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। ওই দিন রাতেই বাবাকে হত্যা করা হয়।” ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বাড়ি সাধুরপাড়া ইউনিয়নে হলেও বকশীগঞ্জ পৌরসভায় তার বাড়ি আছে। আর সাংবাদিককে হত্যা করা হয় বকশীগঞ্জ সদরে তার গরুহাটি বাজার এলাকার বাসা থেকে ১০ মিনিট দূরের পাটহাটি এলাকায়।

রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, ” বাবা রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হন। বাসায় ফেরার পথে রাত সোয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তার ওপর হামলা হয়। তিনি মোটর সাইকেলে ছিলেন। চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার বড় ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়। আমার বাবার ওপরে প্রথমে রাস্তায় হামলা চালায় তাদের গুন্ডা বাহিনি। এরপর টেনে পাশের একটি ঘরে নিয়ে তাকে পিটানো হয়। তাকে মৃত মনে করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর রাত দুইটার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথা পুরোই থেতলে দেয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন আছে।”

নিহত সাংবাদিকের কন্যা আরো বলেন, ” বাবার লাশ দাফন হয়েছে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চেয়াম্যানকেই প্রধান আসামি করবো।” স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের সময় ইউপি চেয়াম্যান ও তার ছেলে সেখানে ছিলেন। তাদের নির্দেশেই ৯-১০টি মোটর সাইকেলে করে সন্ত্রাসীরা সেখানে আসে। বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, “ওই এলাকায় রাস্তার সামনের দিকে সিসি ক্যামেরা আছে। তার ফুটেজ আমরা নিয়েছি। ফুটেজে পাঁচজনের চেহারা স্পষ্ট আছে। পেছনের দিকে আরো লোকজন দেখা যায়, তাদের চেহারা স্পষ্ট নয়। তার ওপরে হামলার পর তাকে মারতে মারতে টেনে পিছনের দিকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে। কিন্তু পিছনে সিসি ক্যামেরা না থাকায় সেখানকর ফুটেজ আমরা পাইনি।”

তিনি জানান, “তবে আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছাড়াও আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তার ভিত্তিতে মোট ছয়জনকে আটক করেছি। আটকদের কাছ থেকেও তথ্য পাচ্ছি। খবর প্রকাশের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নামও এসেছে। তাকে আমরা খুঁজছিG সে পলাতক আছে।” তিনি জানান, থানার থানার পক্ষ থেকে তার পরিবারের সদস্যদের মামলা করতে বলা হয়েছে। বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জি এম বাবু বলেন, “নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম স্বাধীনচেতা ও প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি তার প্রতিবেদেনে কাউকেই, এমনকি সরকারি দলের লোকজনকেও ছাড় দিতেন না। ফলে অনেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। সর্বশেষ ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন করে, তার রিপোর্টও তিনি করেন। এটা নিয়ে তিনি ফেসবুকেও কিছু পোস্ট দেন। এর ফলে ইউপি চেয়ারম্যান তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনেও ওই চেয়ারম্যান মামলাও করেছিল”

তার কথা, “সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অনেক কিছুই স্পষ্ট আছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীও আছে। তারা পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছে। আমরা চাই অপরাধীরা গ্রেপ্তার হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।” এদিকে ইউপি চেয়াম্যান ও তার ছেলেকে তাদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। চেষ্টা করেও তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রশীদ বলেন, “সে আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেও কোনো প্রোগ্রাম ছাড়া আমার সঙ্গে দেখা হতো না। আমাদের বাড়ি একই গ্রামে। তবে গত কয়েকদিনে আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। সাংবাদিক হত্যায় সে জড়িত বলে শুনেছি। তবে সে এবং তারা ছেলেরা বাড়িতে এখন নেই বলে আমি খবর নিয়ে জেনেছি। আমি ফোন করেও তার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। হত্যাকাাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিচার হবে।”হারুন উর রশীদ স্বপন, জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে, ঢাকা

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন