নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে নেই – রাশেদ খান মেনন

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১১:৪৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ | ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে নেই – রাশেদ খান মেনন

রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ডাকসুর ভিপি এবং ১৯৬৪-৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ রানা।

প্রশ্ন: দেশ যেভাবে চলছে, তাতে আপনি কি খুশি?

রাশেদ খান মেনন: দেশকে এগিয়ে যেতে প্রথমত বাধাগ্রস্ত করছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার যদি রোধ করা যেত, তাহলে আমাদের সমস্যা সেভাবে থাকত না। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: দেশে উন্নয়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি মানুষের অভাব-অনটন বাড়ছে। জিনিসপত্রের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কি ব্যর্থ বলবেন?

মেনন: সরকার যেসব বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, অপরদিকে আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হবে। এই বড় প্রকল্পের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। আগামী দিনে তা অব্যাহত থাকবে।

কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্য আয়ের মানুষ শুধু নয়, নিম্ন আয়ের মানুষজন বিপদের মধ্যে পড়েছে। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টা ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। তাদের কাছে সরকার মনে হয় অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকার এই ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ যে কেন করতে পারছে না, তা তো আমি বলতে পারব না।

প্রশ্ন: পাকিস্তানের ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে আপনারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। এখন দেশে ২২ হাজার বা তারও অধিক পরিবারের হাতে ধন-সম্পদ কুক্ষিগত। বৈষম্য কমানোর উপায় কী?

মেনন: আমি প্রতিটি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এসব কথা বলি। বাংলাদেশে একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী আছে, যাদের হাতে এবং নিয়ন্ত্রণে অর্থনীতি, রাজনীতি চলে গেছে। পাকিস্তানের ২২ পরিবার সম্পদ লুণ্ঠন করলেও পাচার করত না। এখনকার ২২ হাজার পরিবার অর্থ পাচার না করত, তাহলেও একটা কাজ হতো। কিন্তু তারা তো সব টাকা বিদেশে পাচার করছে এবং তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এসব একটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

প্রশ্ন: অসাম্প্রদায়িক অবস্থান কি আওয়ামী লীগ সরকার ধরে রাখতে পেরেছে? আপনারা সরকারের সঙ্গে থাকতে হেফাজতের দিকে সরকার ঝুঁকে পড়ে কীভাবে?

মেনন: সরকার বা আওয়ামী লীগ কেন হেফাজতের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তার ব্যাখ্যা বা জবাব তো আমরা দিতে পারব না। আমরা মনে করি, হেফাজত বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে তাদের দিকে কোনো ধরনের নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ বা কোনো কারণ থাকতে পারে বলে আমরা কখনো মনে করি না। আমরা সম্প্রতি এটা আওয়ামী লীগসহ সবাইকে বলেছি।

এখন তারা কি ভোটের হিসাব করছে এবং তাদের নিয়ে কোনো রাজনীতি আছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে হেফাজতের সঙ্গে সখ্যের ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানিয়ে খুবই স্পষ্ট করে বলেছি, হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং একই সঙ্গে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আর এটা সত্যি যে বাস্তবিক অর্থে সরকার এবং আওয়ামী লীগ তার অসাম্প্রদায়িক অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: গত দুটি নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে, তাকে কি গণতান্ত্রিক বলবেন?

মেনন: সন্দেহ তো আছেই। নির্বাচন-প্রক্রিয়ার ত্রুটিবিচ্যুতি তো আছে। কিন্তু তারপরও তো নির্বাচন সময়মতো হচ্ছে। যদিও এ নির্বাচনগুলোতে অর্থের তাণ্ডব এবং পেশিশক্তির প্রভাব ছিল। তারপরও বলব, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনগুলো হয়েছে।

প্রশ্ন: সরকার ঝামেলায় পড়লে ১৪ দল সক্রিয় হয়। ১৪ দল কি শুধু আওয়ামী লীগের অসময়ের মিত্র?

মেনন: সত্যি বলতে কি, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। এটা শুধু অসময়ের মিত্র নয়, সব সময়ের মিত্র থাকার কথা ছিল। একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে সবকিছু করার কথা ছিল আওয়ামী লীগের। এসব ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ঐক্যের ভিত্তি। কিন্তু সেই কমিটমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগ অনেক দূরে সরে গেছে। ফলে ১৪-দলীয় জোটের আগের যে অবস্থান ছিল, সেটা এখন আর নেই।

সে জন্য ১৪-দলীয় জোট আগের থেকে অনেকখানি শক্তিহীন বা ঝিমিয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, এই শক্তিটাকে ক্ষয় না করাটাই ঠিক হবে। এই জোটের শক্তিহীনতা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

প্রশ্ন: দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার বাস্তবতা কতটুকু আছে বলে আপনি মনে করেন?

মেনন: পৃথিবীব্যাপী দুর্ভিক্ষের বাস্তবতা থাকলেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, আমাদের কৃষি উৎপাদন এবং কৃষকের প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আর দেশের পতিত জমিগুলো নিজ প্রচেষ্টায় চাষাবাদ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। আমি মনে করি, জনগণ নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করবেন। আমাদের দেশে কোনো দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হবে না বলে আমার বিশ্বাস আছে।

প্রশ্ন: সরকার পতনের আন্দোলনে আছে বিএনপি। এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?

মেনন: আমি তো কোনো ভবিষ্যৎ দেখি না। তারা যে এ আন্দোলনে আপামর জনগণকে শামিল করতে পেরেছে, তা-ও আমি মনে করি না। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা ছাড়া এবং ব্যাপক জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো আন্দোলন বেগবান করা যায় না। তারা এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে বলে আমি মনে করি। জনগণ ক্ষুব্ধ আছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ কারণে জনগণ বিএনপির দিকে যাবে—আমি এটা কোনোভাবেই মনে করি না। জনগণ বিএনপিকে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে ভাবতে পারছে না।

প্রশ্ন: বিএনপি তো রাষ্ট্র সংস্কারের একটা রূপরেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

মেনন: আমি মনে করি, মোটেই এটা রাষ্ট্র সংস্কারের যথার্থ কোনো রূপরেখা নয়। এটা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনীর দিকে ফিরে যাওয়া। তারা তাদের পুরোনো রাজনীতির রং একটু বদল করে জনগণের কাছে হাজির করেছে। এটা করে তারা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সঙ্গে আনার চেষ্টা করেছে। এর মাধ্যমে তারা মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সবাই মনে করছে, এই রূপরেখার প্রথম দফায় নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের যে কথা বলা হয়েছে, তা বাহাত্তরের সংবিধানকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে পিছিয়ে দেবে।

প্রশ্ন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মেনন: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠকদেরও ধন্যবাদ। সুত্র : আজকের পত্রিকা

শেয়ার করুন