নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্ধেক রোবট অর্ধেক মানুষ!

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:১৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:১৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
অর্ধেক রোবট অর্ধেক মানুষ!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে রোবট ব্যবহারের অভিনব এক প্রকল্প নজর কেড়েছে বিশ্বের। জাপানে এক ক্যাফেতে মানুষের আড্ডার সঙ্গী হিসেবে রোবট কাজে লাগানো হচ্ছে। কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ নামের রেস্তোরাঁটিতে রোবটও কাজ করে। সেগুলোর কয়েকটি অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করে।

কয়েকটি আবার চেয়ারে বসে কফি পান করতে আসা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে। রোবটগুলোতে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা না থাকলেও রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলোর সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারেন! জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই।

এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা বা নিয়ন্ত্রকরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে এমন মানুষরাই সেই কাজটি করেন। তারা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন।

টোকিও শহরের ওই ক্যাফেতে কাজ করা তেমনই একজন মায়া। ডয়চে ভেলে বলছে, এক ক্রনিক রোগের কারণে তাকে এখন হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছুদিন আগেই ২৪ বছর বয়সী সেই নারীর কোনো কাজ ছিল না। জীবন নিয়ে হতাশ ছিলেন তিনি। কিন্তু ডন ক্যাফেতে কাজ পেয়ে তার জীবনটা বদলে গেছে।

মায়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো কাজের সুযোগ না পেয়ে খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল। তখনই পাইলটের এই চাকরির খবর পেলাম। সেটা সত্যি অসাধারণ। অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরেরবারও দেখা হবে কি না এমন প্রশ্ন শুনলে কৃতজ্ঞ বোধ করি। মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে খুব আনন্দ হয়।

অরি ল্যাবরেটরি নামের কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেন্তারো ইয়োশিফুজি অভিনব ওই প্রকল্পের উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন। স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেননি। সে সময় তার মনে হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই-না হতো! অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতেন।

সেই কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার দর্শনও ভিন্ন। তিনি বলেন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরও দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না। বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য।

ওই ক্যাফেতে কফি পান করতে আসা রেই নামে এক অতিথি বলেন, আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি। মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়।

শেয়ার করুন