নিউইয়র্ক     শনিবার, ২২শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় মসলায় ‘বিষ’, খতিয়ে দেখছে এফডিএ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪ | ০১:০১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ | ০১:০১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ভারতীয় মসলায় ‘বিষ’, খতিয়ে দেখছে এফডিএ

ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কীটনাশক থাকার অভিযোগেএমডিএইচ ও এভারেস্ট ব্রান্ডে দুটি ভারতীয় মশলা প্রস্তুতকারকের তৈরি পণ্যগুলি খতিয়ে দেখছে। সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ভারতীয় মসলা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছি যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে একই অভিযোগে হংকং, সিঙ্গাপুর ও নেপাল ভারতীয় দুই মসলা প্রস্তুতকারী কম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভারতীয় কম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট মসলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতির কারণে আমদানি ও বিক্রিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

নেপালের খাদ্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মুখপাত্র মোহন কৃষ্ণ মহারজান এএনআইকে জানিয়েছেন, ‘নেপালে এভারেস্ট এবং এমডিএইচ ব্র্যান্ডের মসলা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপাতত নেপালে ওই ব্র্যান্ড দুটির মসলা খাওয়া, কেনা ও বিক্রি করা যাবে না।

মসলায় ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতির জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং এখন আমরা বাজারে এই মসলার বিক্রিও নিষিদ্ধ করেছি।’ মসলা নিয়ে নতুন কড়াকড়ি চালু করেছে ব্রিটেনও।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় মসলা ব্র্যান্ড এভারেস্ট এবং এমডিএইচ-এর পণ্য আমদানি, ব্যবহার এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে নেপালের খাদ্য প্রযুক্তি ও গুণমান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। ভারতীয় এই দুই কম্পানির মসলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ইথিলিন অক্সাইডের মাত্রার স্তরও নেপাল পরীক্ষা করছে বলে দেশটির এক কর্মকর্তা এএনআইকে নিশ্চিত করেছেন। ইথিলিন অক্সাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার মানব শরীরে ডেকে আনতে পারে ক্যান্সারের মতো মারণরোগ।

এরপরই ভারতীয় কোম্পানির মসলা পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

এফডিএর ভারতীয় মসলা পণ্যের কথিত দূষণের পর্যালোচনার প্রতিবেদন সর্বপ্রথম প্রকাশ করে রয়টার্স। ভারতে এই দুই কম্পানির গুঁড়া মসলা ব্যাপক জনপ্রিয় এবং ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায়ও রপ্তানি করা হয়। ভারতের মসলার বাজারের অন্যতম বৃহৎ দুই কম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেস। এই মসলাগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশও। বিশ্বজুড়ে অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে ভার‍ত।

মসলায় ‘বিষ’ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা যাচাই করতে এবার আরো নিখুঁত এক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’। ভারত থেকে অন্য দেশে পাঠানো মসলা, বাইরে থেকে আনা মসলা এবং দেশে ব্যবহারের জন্য যে মসলা তৈরি হয়, সবই যাচাই করে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই দেড় হাজার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এর আগে বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় উৎস থেকে সংগৃহীত ৫২৭ খাদ্যপণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি। এ খবর এমন সময় প্রকাশ পেল যখন এমডিএইচ, এভারেস্টসহ কয়েকটি ভারতীয় মসলা ব্র্যান্ডের পণ্যে অনুমোদিতের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইথিলিন অক্সাইডের উপস্থিতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে।

ভারতীয় মসলার উপাদান নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলমান বিতর্কে বাংলাদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় মসলার শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও জনস্বাস্থ্যে পণ্যগুলোর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্মকর্তারা।

ইথিলিন অক্সাইড মূলত একধরনের বর্ণহীন গ্যাস। এটি সাধারণত কীটনাশক হিসেবে ও স্টেরিলাইজিং এজেন্ট (জীবাণুমুক্তকারী) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর উদ্ভাবন হয়েছিল মূলত চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে। যদিও এক পর্যায়ে কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ইথিলিন অক্সাইডকে গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।

ভারতের বাজার গবেষণা সংস্থা জিওন মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এই দুই কম্পানি ১০ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মসলা বিক্রি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ২০২২-২৩ সালে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মসলা রপ্তানি করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের মসলা বোর্ড।

শেয়ার করুন