নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এইচআরডব্লিউ-র বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
এইচআরডব্লিউ-র বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গ

বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ বছরের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। নিজেদের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্র্টটি প্রকাশ করে সংগঠনটি। এতে বাংলাদেশ নিয়ে একটি বিস্তারিত অংশ রয়েছে, যা ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেকার অবস্থাও।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের দমন-পীড়ন: নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলের সদস্যদের গণগ্রেপ্তার করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভের জবাব দিয়েছে। বিরোধীদলীয় সদস্যদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেছে। উদ্দেশ্য ছিল, যাতে বিরোধীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) ৫০ লাখ সদস্যের অর্ধেকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের সম্মুখীন।

২০১৩ সালে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচার ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে এবং ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহারের জন্য সমালোচনার মুখে পড়ার পর সেপ্টেম্বরে সরকার এর পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (সিএসএ) চালু করে। নতুন আইনটি ডিএসএ’র অনেক আপত্তিজনক উপাদান ধরে রেখেছে।

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও দায়মুক্তি: বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০০টিরও বেশি গুম করেছে।

যদিও কিছু লোককে পরে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, কিছু লোককে আদালতে হাজির করা হয়েছিল, কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। প্রায় ১০০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের পরিবারকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে।

২০২১ সালে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিরুদ্ধে মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই কিছু সময়ের জন্য কিছু অপব্যবহার কমে যায়। তবে গুমসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহার আবার শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা হেফাজতে নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়াও লক্ষ্য করেছেন। বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ খুব কমই তদন্ত বা বিচারের সম্মুখীন হয়।
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশগুলো অনুসরণ করার জন্য বাংলাদেশ বারবার অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। কমিটির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, সব ডিটেনশন সাইটের স্বাধীন মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্যাতন বা দুর্ব্যবহারের সব অভিযোগের তদন্ত করা।

বাকস্বাধীনতা: নির্বাচনের আগে উন্মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্কের শর্তকে ক্ষুণ্ন করে সরকারের নীতি ও অনুশীলনের অবাধে সমালোচনা করার জন্য সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছেন। নিউজরুমগুলো আরও স্ব- সেন্সরশিপের দিকে চালিত হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৩০শে মার্চ বাংলাদেশের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে একটি নিবন্ধে ‘জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ করার অভিযোগে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে কর্তৃপক্ষ। একই ঘটনায় সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডিএসএ’র অধীনে মামলা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে প্রথম আলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের ‘শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার বক্তব্যের পর প্রথম আলোর কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়।

শহিদুল আলম ও রোজিনা ইসলামের মতো বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে ডিএসএ’র অধীনে অভিযোগ রয়েছে। নতুন ‘সিএসএ’তে পূর্ববর্তী ‘ডিএসএ’র অনেক অপমানজনক উপাদানকে ধরে রাখা হয়েছে, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচকদের অপরাধী ও কারাগারে পাঠানোর জন্য কর্মকর্তাদের বিস্তৃত কর্তৃত্ব দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২১ ধারা, যা ‘মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের প্রচার বা প্রচারণা’কে অপরাধ বলে গণ্য করে।

বাংলাদেশ সরকারকে লেখা এক চিঠিতে জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সিএসএ’তে অস্পষ্ট ও অত্যধিক বিস্তৃত বিধান রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের বৈধ মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। এই বিধানগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে পুনরায় তৈরি করা হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন করে সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং দীর্ঘায়িত আটক, হেফাজতে মৃত্যু এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণসহ গুরুতর নেতিবাচক মানবাধিকার পরিণতির দিকে পরিচালিত করেছে।

শ্রম অধিকার: গত ২৫শে জুন শ্রমিক সংগঠকদের ওপর হামলার পর কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি আদায়ের জন্য একটি কারখানা পরিদর্শনে গেলে শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শহিদুল হত্যাকাণ্ড সামাজিক নিরীক্ষা এবং প্রমাণপত্রের অপর্যাপ্ততা তুলে ধরেছে, যা ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা কারখানায় কাজের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করে। স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠিত করার চেষ্টা করা শ্রমিকদের হুমকির পর্যাপ্ত প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থতার বিষয়টিও উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন ও সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের সংগঠন এবং সম্মিলিত দর কষাকষির স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনো শ্রম আইন সংশোধন করতে পারেনি- যার মধ্যে ম্যানেজারদের দ্বারা ইউনিয়নবিরোধী কৌশল এবং স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠকদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত।

ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত নভেম্বরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৭৫ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১১৩ করে সরকার। বিক্ষোভকারীরা ২০৮ মার্কিন ডলার বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল, যা এখনো বাংলাদেশের বাসযোগ্য মজুরির চেয়ে অনেক কম।
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির প্রকোপ বেশি হওয়া সত্ত্বেও ২০০৬ সালের শ্রম আইন কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত বা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে না। কর্তৃপক্ষ এখনো আইএলও সহিংসতা ও হয়রানি কনভেনশন (সি-১৯০) অনুমোদন করতে পারেনি, যেখানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ সকল ধরনের সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে ব্যাপক সুরক্ষা প্রয়োজন।

নারী অধিকার: পারিবারিক সহিংসতার জন্য সুরক্ষা বা সেবা পেতে বা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নারীদের খুব কম আশ্রয় রয়েছে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি, যেখানে ১৮ বছরের আগে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে বাল্যবিবাহকে বৈধতা দেয়ার লজ্জাজনক গৌরব অর্জন করেছে। মেয়েরা ব্যাপক যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয় এবং খুব কম আশ্রয় ও সুরক্ষা পায়। বাংলাদেশে অনুমান করা হয় যে, পুলিশ কর্তৃক তদন্ত করা ধর্ষণের ১ শতাংশেরও কম মামলায় আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

যৌন অভিমুখিতা এবং লিঙ্গ পরিচয়: যদিও বাংলাদেশ হিজড়াদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের লিঙ্গ পরিচয় আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আপত্তিকর মেডিকেল পরীক্ষা করতে বাধ্য করে। গত ১২ই আগস্ট চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৮ হিজড়াকে নগ্ন করতে বাধ্য করে পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে জানায়, আটককৃতরা হিজড়ার ছদ্মবেশে লোকজনের কাছে চাঁদাবাজি করেছে। বাংলাদেশে সমকামী আচরণ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এলজিবিটি লোকেরা পুলিশের কাছ থেকে সুরক্ষা ছাড়াই হয়রানি এবং সহিংসতার মুখোমুখি হয়।

প্রতিবন্ধী অধিকার: গত জুনে সমাজকল্যাণ ভাতা ৮৫০ টাকা (৭ মার্কিন ডলার) থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা (৪৫ মার্কিন ডলার) করার দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও মাসিক ভাতা বাড়ানো হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের জুনে উত্তরাঞ্চলে অভূতপূর্ব বন্যার সময় প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের সুরক্ষা, পরিষেবা এবং অবকাঠামোর অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

শরণার্থী: বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছে। শরণার্থীরা শিক্ষা, জীবিকা এবং চলাচলের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা দোকান-মালিকদের হয়রানি ও উচ্ছেদসহ তাদের দোকান ধ্বংস করে পুনরায় শুরু করে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরিত করেছে, যেখানে তারা খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি, বন্যা, পানিবাহিত রোগ, ডুবে যাওয়া এবং সাইক্লোন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আহত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা প্রদান, নিরাপত্তা বজায় রাখা বা দায়ীদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। শরণার্থীরা পুলিশ, আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে দাতাদের অনুদানের জন্য চাওয়া ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক-তৃতীয়াংশেরও কম পেয়েছে। তহবিলের ঘাটতির কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছে, যা জনপ্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে মাত্র ৮ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। তারা ক্যাম্পে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও জীবিকা নিশ্চিত করতে টেকসই সমাধানকে সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানায়। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, ৪ লাখেরও বেশি শরণার্থী শিশুর মধ্যে ৩ লাখ মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি শেখানোর ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু তাদের শিক্ষা স্বীকৃত নয়। সরকার একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা জবরদস্তি ও প্রতারণার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয়াদি: ২০২৩ সালের ৪ঠা আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে সকল রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। গত মার্চে জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং এ বছরের নির্বাচনকে সামনে রেখে মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের অব্যাহত হয়রানির ঘটনায় আমি দুঃখিত।

গত মে মাসে মার্কিন সরকার একটি নতুন নীতি ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে বিরোধী দল ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন কংগ্রেস সদস্য। ২০২৩ সালের ৩১শে আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ ১৭০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক হয়রানি স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য চলমান হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেন, দেশের মানবাধিকার উন্নয়ন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা করেন এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বয়স্কদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বয়স্কদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকারের ঘটনা’ শীর্ষক একটি জরুরি রেজুলেশন পাস করে অধিকারের নেতাদের মুক্তি এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের নিন্দা জানায়। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় অধিকারের নেতৃবৃন্দসহ মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শেয়ার করুন