নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক বছরে বাংলাদেশে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা – জরিপ

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০:২৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ | ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
এক বছরে বাংলাদেশে ৫৩২ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা – জরিপ

২০২২ সালে সমগ্র বাংলাদেশে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষার্থী। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮৬ জন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে তারা। আজ শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সভায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী জানান, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ জন, কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন। এদের মধ্যে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী ৫৪ জন। স্কুল, কলেজ ও সমমান পর্যায়ের আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ৪৪৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ২৮৫ জন এবং পুরুষ ১৬১ জন। আত্মহত্যার মাসভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে ২১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৩৪ জন স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

সারা দেশের মোট আটটি বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, যা ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ, যা ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ, যা ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননকারী নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়। সংখ্যায় তা ৪০৫ জন এবং শতকরা হিসাবে ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ৪৩ জন বা ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এই বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানাবিধ বিষয়ের সম্মুখীন হয়, যা তাদের আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে বাধ্য করে। মান-অভিমান শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে।

অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহ ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততা ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মানসিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হয়ে ৬ জন, ভিডিও গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭ জন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার চিত্র নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এই বয়সে ছোট ছোট বিষয়গুলোও তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।’ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় আঁচল ফাউন্ডেশন ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বাড়ানো, সন্তানদের মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানো।

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন