নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৮০০ জনকে পাচার করেছে চক্রটি

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:৩৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
৮০০ জনকে পাচার করেছে চক্রটি

দুবাইয়ের কথিত ভিজিট ভিসা দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার প্রলোভনে ফেলছে একটি প্রতারকচক্র। অল্প শিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের লোকজনকে নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করছে। চক্রটি দালালদের হাতে তুলে দিয়ে আটকে আদায় করছে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ। মুক্তিপণ না দিলে তাদের ভাগ্যে নেমে আসছে অমানবিক নির্যাতনের খড়গ। কাউকে কাউকে উলঙ্গ করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠানো হচ্ছে; যাতে তারা বাধ্য হয় মুক্তিপণ পাঠাতে। এমন একটি চক্রকে ধরছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটির সঙ্গে একাধিক দালালচক্রের সংযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। চক্রটি নতুন রুট দিয়ে ইউরোপের যাওয়ার জন্য বিভিন্নজনকে প্রলোভন দেখাতো। তাদের কথিত নতুন রুট হচ্ছে, ভিজিট ভিসায় দুবাই হয়ে সাগর পথে ইরানে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরস্ক হয়ে হয়ে গ্রিস ও বুলগেরিয়ায় যাওয়ার কথা বলতো।

তাদের কথার ছলে অনেক যুবক জমি এমনকী নিজ বসতভিটা বিক্রয় করে সব খুঁইয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। এই চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন ব্যক্তিকে পাচার করে দুবাই নিয়ে গেছে। অনেকেই তাদের এই প্রতারণার বিষয়টি বুঝেই আগেই বাংলাদেশে ফেরত চলে এসেছেন। আর যারা বুঝেননি তারা দালালের ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। খুঁইয়েছেন কাড়ি কাড়ি অর্থ।

গত ১৬ই জানুয়ারি ও ২৬শে জানুয়ারি ঢাকার আবদুল্লাহপুর ও চট্টগ্রাম থেকে এ চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা হলো- ছোলামত উল্লাহ (৩৬), মাহমুদুল হাসান (২৭) ও জাহাঙ্গীর আলম বাদশা (৪১)। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি এ চক্রের মানব পাচারের ধরন, অর্থ আদায়সহ নানা কর্মকাণ্ড জানতে পারে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতারুজ্জামান মানবজমিনকে জানান, ‘এক ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। তিনি জানান, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছোলামত উল্লাহ ও মাহমুদুল হাসান আগে এয়ার কন্ডিশন মেরামতের কাজ করতো। পরে এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হলে তারাও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’ মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিআইডি’র এক ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চক্রটি অভিনব পন্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতো। একজন ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তিকে বলতো যে, ভিজিট ভিসায় আগে দুবাই নিয়ে যাওয়া হবে। মাত্র ২০ হাজার টাকা দিলেই যাওয়া যাবে দুবাই। পরে সাগর পথে ইরানে যাওয়ার সময় বাকি টাকা নেবেন। প্রথমে ২০ হাজার টাকা নেয়ার পর আর কিছুদিন পর বিভিন্ন ভিকটিমের কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করতো। পরে একসময় তাদের ভিজিট ভিসায় নিয়ে যাওয়া হতো দুবাইয়ে।

সূত্র জানায়, দুবাই যাওয়ার পরেই প্রতারণা শুরু হতো চক্রটির। তারা ইরানের পারস্য সাগর পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিকটিমের কাছে ২ লাখ টাকা করে আদায় করতো। পরে পারস্য সাগর দিয়ে এক ভয়ঙ্কর যাত্রার মাধ্যমে ইউরোপগামী যাত্রীদের নিয়ে যেতো ইরানে। সেখানে তার্কিস সীমান্ত যাওয়ার জন্য আবার চাওয়া হতো ৩ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, অনেক ভিকটিম অন্যায়ভাবে চাহিদাকৃত টাকা না দিতে চাইলে চক্রটি তাদের একটি বন্দিশালায় রাখতো। সেখানে তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। সেই নির্যাতনের ছবি আবার পাঠানো হতো পরিবারের কাছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিরিশ ঊর্ধ্ব এক যুবক কান্না করে তার বাবাকে ফোন দিয়ে বলছে, ‘বাবা আমাকে তারা নির্যাতন করছে। তুমি যেখান থেকে পারো টাকা পাঠাও।’ অনেক পরিবার এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও এই চক্রের সদস্যদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে। সূত্র জানায়, একাধিক ভিকটিম দুবাইয়ে যাওয়ার পর তাদের প্রতারণা বুঝে ফেলে তারা দ্রুতই চক্রের বেড়াজাল থেকে পালিয়ে গেছেন। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিমান ভাড়া পাঠালে তারা বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। কিছু ভিকটিম এই চক্রের সদস্যদের বিষয়ে সিআইডিকে তথ্য দিয়েছে। এই চক্রের একাধিক অফিস আছে ঢাকার বিভিন্নস্থানে। তাদের অফিস দেখে সাধারণ মানুষের বুঝে উঠার কোনো উপাই নেই যে, তারা বড় মাপের প্রতারণাকারী। সিআইডি এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র: মানবজমিন

শেয়ার করুন