নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ইরানি নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ইরানি নারীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা

হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন ইরানের এক নারী দাবা খেলোয়াড়। কাজাখস্তানের একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে হিজাব ছাড়াই অংশ নেন ওই নারী দাবাড়ু। যদিও যেকোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ইরানের নারী খেলোয়াড়দের হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মিডিয়া রিপোর্টের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

জন দাবা খেলোয়াড় হিজাব ছাড়াই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন বলে মিডিয়া রিপোর্টে উঠে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজাব ছাড়াই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হওয়ার সর্বশেষ ঘটনা এটি।

ইরানের সংবাদমাধ্যম খবরভারজেশি এবং ইতেমাদ তাদের গত সোমবারের প্রতিবেদনে বলেছে, কাজাখস্তানের আলমাটিতে এফআইডিই ওয়ার্ল্ড র‌্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ নামে একটি দাবা টুর্নামেন্টে হিজাব ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সারা খাদেম নামে এক নারী দাবাড়ু। যদিও ইরানের কঠোর পোশাক নীতির অধীনে নারী খেলোয়াড়দের হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক।

উভয় সংবাদমাধ্যমের পোস্ট করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, টুর্নামেন্ট চলাকালীন সারা খাদেমের মাথার স্কার্ফ নেই। খবরভারজেশি অবশ্য সারার স্কার্ফ পরা একটি ছবিও পোস্ট করেছে কিন্তু এটি একই ইভেন্টে তোলা হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে এই দাবা টুর্নামেন্ট বা হিজাব ছাড়াই সেখানে অংশগ্রহণের বিষয়ে সামনে আসা প্রতিবেদন সম্পর্কে সারা খাদেমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে কোনও মন্তব্য করা হয়নি এবং এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে সরাসরি যোগাযোগ করার হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি।

আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, সারা খাদেম ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি সারসাদত খাদেমালশারিহ নামেও পরিচিত। ২৫-৩০ ডিসেম্বরের এই ইভেন্টের ওয়েবসাইটে তাকে র‌্যাপিড এবং ব্লিটজ উভয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইরানি কর্তৃপক্ষের নানামুখী দমন-পীড়নের পরও বিক্ষোভে ভাটা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ঘটনার আগেও হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে সমর্থনের প্রতীক হিসেবে হেড স্কার্ফ না পরেই অন্য একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ইরানের আরও এক নারী ক্রীড়াবিদ।

আলোচিত ওই নারী ইরানি ক্রীড়াবিদের নাম এলনাজ রেকাবি। তিনি গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান রক ক্লাইম্বিং প্রতিযোগিতায় হিজাব না পরেই অর্থাৎ নিজের চুল খোলা রেখেই অংশ নিয়েছিলেন। যদিও যেকোনও ধরনের প্রতিযোগিতায় ইরানের নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য হিজাব পরা অপরিহার্য।

ডিসেম্বরের শুরুতে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছিল, ৩৩ বছর বয়সী এলনাজ রেকাবি গত অক্টোবর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় ইরানের বাধ্যতামূলক পোশাক কোড লঙ্ঘন করেন। এতে করে হিজাববিরোধী আন্দোলনকারীদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে এলনাজ রেকাবি জানান, তার হেডস্কার্ফ ‘অসাবধানতাবশত’ পড়ে গেছে।

অবশ্য বিবিসিকে বলা হয়েছিল, এলনাজ রেকাবিকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছিল। তবে হেড স্কার্ফের বিরোধিতা হিসেবে মনে করে এলনাজের সেই ছবি ইরানে চলমান বিক্ষোভকে আরও জোরদার করেছিল এবং রেকাবিকে সেসময় নায়ক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, ইরানের নারীদের হেড স্কার্ফ বা হিজাব দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হয় এবং তাদের হাত ও পা ঢিলেঢালা পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। নারী ক্রীড়াবিদরা যখন বিদেশের প্রতিযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের প্রতিনিধিত্ব করেন তখন তাদের ইরানি পোশাক কোড মেনে চলতে হয়।

উল্লেখ্য, হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় চলে যান ওই তরুণী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাহসা আমিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

শেয়ার করুন