নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে নিহত প্রায় ১৪০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১১:৫০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে নিহত প্রায় ১৪০০

বাতাসে বারুদের গন্ধ। একের পর এক ইসরাইলি বোমা হামলা হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজায়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ যুদ্ধে ইসরাইলের আট শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অপরদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় ৫৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফলে উভয় পাশে নিহতের সংখ্যা ১৪০০র কাছাকাছি পৌছে গেছে। তবে হামলা-পাল্টা হামলার যে তীব্রতা দেখা যাচ্ছে তাতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এ অবস্থায় গাজার কাছে এক লাখ রিজার্ভ সেনা জড়ো করেছে ইসরাইল। তাদের সেনা মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের কাজ হলো এটা নিশ্চিত করা যে, এই যুদ্ধ শেষ হয়েছে। ইসরাইলের বেসামরিক মানুষদের হুমকি হওয়ার কোনো সক্ষমতা যাতে না থাকে হামাসের, তা নিশ্চিত করা। আমরা এটাও নিশ্চিত করবো যে, গাজা উপত্যকা যাতে আর শাসন করতে সক্ষম না হয় হামাস।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধা, যারা ইসরাইলে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের শেষ ব্যক্তিকে পর্যন্ত খুঁজে বের করবে ইসরাইলি সেনারা। ওদিকে জাতিসংঘ বলছে, গাজায় বিমান হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ। বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৭৪ হাজার ফিলিস্তিনি। তেল উত্তোলনকারী ওই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী একটি যুদ্ধের আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা থমকে গেছেন। ফলে সোমবার তেলের মূল্য বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ইসরাইলকে সমর্থন দিতে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান বহনকারী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। রোববার রাতেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের দক্ষিণে রকেট হামলা করা হয়েছে। তবে শনিবার হামাস যে পরিমাণ রকেট হামলা করেছে তা দুই দশকের ইতিহাস ভঙ্গ করেছে। ইসরাইলে সেনা সহ অনেক মানুষকে জিম্মি হিসেবে আটক করেছে হামাস।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলকে কঠিন ও অটল সমর্থন দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই অঞ্চলে এ জন্য যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, ইসরাইলকে অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র দেয়া হবে। একই সুরে কথা বলেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনিও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অটল সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন- সাহায্য করতে আমরা যা পারি, তার সবটাই করবো। সন্ত্রাসের জয় হবে না। অন্যদিকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তৃত, টেকসই ও দীর্ঘপ্রতীক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনও উভয় পক্ষকে সহিংসতা এবং অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর মধ্যে থাকবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

শনিবার হামাস ইসরাইলে কয়েক হাজার রকেট হামলার পর ভয়াবহ প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি গাজাকে নির্জন দ্বীপে পরিণত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এর অর্থ গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি ফিলিস্তিনিমুক্ত করে ইসরাইলের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা। এমন প্রেক্ষাপটে রোববার হামাসের সমর্থনে ইসরাইলে গুলি ও রকেট হামলা চালিয়েছে আরেক যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতে ইসরাইল ও তার বিরোধী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যাপক আকারে এক আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওদিকে ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইরান- এমন কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। তিনি সতর্ক করেন এই বলে যে, বছরের পর বছর ধরে ওই অঞ্চলকে বিপন্ন করার জন্য অবশ্যই ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে হবে। তবে জাতিসংঘে ইরান মিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ভেতরে হামাসের আকস্মিক রকেট হামলার সঙ্গে ইরান জড়িত নয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ়তার সঙ্গে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই। ফিলিস্তিনিরা জবাবে যেটা করেছে তার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। রকেট হামলা করেছে ফিলিস্তিন নিজেরাই। সাত দশক ধরে যে নিষ্পেষণমূলক দখলদারিত্ব ও হায়েনার মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার পূর্ণাঙ্গ বৈধ অধিকার আছে ফিলিস্তিনিদের।

এদিকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যখন ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে, তখন রুদ্ধদ্বার জরুরি অধিবেশন শেষ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু এ ইস্যুতে তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতি হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানানোর আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের কাছে মার্কিন সিনিয়র কূটনীতিক রবার্ট উড বলেন, হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেশ কিছু দেশ। তবে স্পষ্টতই সবাই নিন্দা জানায়নি। তাদের সম্পর্কে আমি কিছু না বললেও সম্ভবত আপনারা তাদের একটি দেশকে চিনতে পারেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি রাশিয়ার দিকে ইঙ্গিত করেন। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক চলে প্রায় ৯০ মিনিট। এতে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তির দূত টোর ওয়েন্সল্যান্ডের ব্রিফিংয়ের ওপর শুনানি হয়। কূটনীতিকরা বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর চেয়ে রাশিয়ার সদস্যরা তাদের দেশের ওপর ব্যাপক নজর দেয়া হবে বলে আশা করছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো প্রস্তাবে যৌথ বিবৃতির জন্য প্রয়োজন সর্বসম্মত মত। জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া পরিষদে বলেছেন, আমার বার্তা হলো অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। অস্ত্রবিরতি করতে হবে। অর্থপূর্ণ সংলাপ হতে হবে। দশকের পর দশক ধরে এই কথাটিই বলা হয়েছে। অনিষ্পন্ন এই ইস্যুগুলোর আংশিক ফল এই যুদ্ধ।

এই মিটিংয়ে যোগ দেননি ইসরাইল বা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কেউ। তবে ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের জন্য কূটনীতিকদের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলো যখন ইসরাইলিরা মারা যান, তখন কিছু মিডিয়া এবং রাজনীতিক কথা বলা শুরু করেন। তিনি আরও বলেন, এটা সেই সময় নয় যখন ইসরাইলকে তার ভয়াবহতা দ্বিগুণ করতে অনুমতি দেয়া যায়। এটা সেই সময়, যখন ইসরাইলকে তার পথ পরিবর্তনের জন্য বলা উচিত। তাদেরকে বলা উচিত শান্তির একটি পথ আছে। তাতে কোনো ফিলিস্তিনি বা ইসরাইলি নিহত হবেন না।

শেয়ার করুন