নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদি-ইরান বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যে কতটা প্রভাব ফেলেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৪৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৪৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সৌদি-ইরান বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যে কতটা প্রভাব ফেলেছে

ইরান মদদপুষ্ট হিজবুল্লাহ লেবাননে বেশ শক্তিশালী। ছবি : সংগৃহীত

তেহরান ও রিয়াদে কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালুর প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজি হয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চালুর বিষয়েও কথা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সৌদি আরব ও ইরানের বিরোধ সবসময় রাজনীতি-অর্থনীতি বিশ্লেষকদের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে থাকে।

গত শুক্রবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান বৈঠকে মিলিত হন এবং একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান। ফলে আশা করা হচ্ছে, এবার বুঝি বছরের পর বছর ধরে চলমান মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার অবসানের পথ বের হতে যাচ্ছে। চীনের মধ্যস্থতায় গত ১০ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশ দুটি সম্পর্ক পুনস্থাপনে সম্মত হয়। তবে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে কারণ, সৌদি আরবে মুসলমানদের সিংহভাগ সুন্নি আর ইরানে সিংহভাগ শিয়া।

সিরিয়া

২০১১ সালে সিরিয়ায় বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সবে তাদের সক্ষমতা দেখাতে শুরু করেছে। নানাবিধ হামলা এবং সশস্ত্র ও রাজনৈতিক আন্দোলন সত্ত্বেও ইরানের মদদপুষ্ট বাশার আল-আসাদ সরকার বহাল তবিয়তে রয়ে যায়। তবে সৌদি আরব সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাতের জন্য বিরোধী পক্ষকে মদদ দিয়ে আসছে। সৌদি-ইরান সম্ভাব্য সমঝোতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার সুবাতাস বইতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি আরব বলছে, আলোচনাসহ অন্যান্যভাবে আরও আলাপের সুযোগ পাওয়া গেলে এমনও হতে পারত সিরিয়াকে আবারও আরব লীগে যোগদান করানো যেত।অন্যদিকে ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে যেতে চায়। একই সঙ্গে সিরিয়ায় ইরানের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর সামরিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।

লেবানন

ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের ছোট্ট দেশ লেবানন। ছোট হলেও সৌদি-ইরান বিরোধের জের গিয়ে ঠেকেছে দেশটির অর্থনীতিতে। লেবাননের শাসকশ্রেণির লোকজন সবসময়ই পৃথিবীর ক্ষমতাধর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। লেবানন-সৌদি আরব সম্পর্ক বেশ ভালই। লেবাননের সুন্নি প্রধানমন্ত্রীদের এক্ষেত্রে অবদান রয়েছে। তবে এতে কিছুটা ভাটা পড়তে শুরু করে ২০১৬ সালে। ইরানের মদদপ্রাপ্ত হিজবুল্লাহ’র সঙ্গে বিশেষ সখ্যতা থাকা লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আওন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সৌদি-লেবানন সম্পর্কে কিছুটা খামতি দেখা দেয়।

২০১৭ সালের নভেম্বরে হঠাৎ করে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থান করছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। হারিরি সেসময় অভিযোগ তোলেন, লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে ইরান। বর্তমানে লেবাননের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। রিয়াদ যেখানে নিজেদের পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে, ঠিক এমন সময়ই দেশটি লেবাননকেও সহায়তা দেওয়ার কথা জানাচ্ছে।

ইরাক

সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেইন নিজের আমলে ইরাকের সবকিছু থেকে ইরানকে দূরে রাখতে পেরেছিলেন। এরপরও বিশেষ করে সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরানের পক্ষ থেকে ইরাকের অনেক দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে ইরাকে ইরানবিরোধী মনোভাব দিনকে দিন ইরাকে শক্ত হচ্ছে। ফলে বাগদাদে সৌদি প্রভাবও বাড়ছে।

ইয়েমেন

ইয়েমেনে হুতিদের শায়েস্তা করতে ২০১৫ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালানো শুরু করে। হুতিদের প্রভাবমুক্ত করে ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির সরকারকে সহায়তা করতে হামলা চালানো হলো। হুতি আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই জাইদি শিয়া মুসলমান। হুতি আন্দোলন যখন ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল দখলে নিয়ে নেয়, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর ফলাও করে প্রচার করে। তারা রাজধানীর দিকে আগাতে থাকলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে চলে যান। ইয়েমেনে অস্থিতিশীলতার মাঝে হুতি আন্দোলন ছাড়াও বেশকিছু সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে আল-কায়েদা ইন এরাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি) ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সাউদার্ন ট্রাঞ্জিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) অন্যতম।

২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ইয়েমেন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২৪ হাজারের বেশি বোমা হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে হুতি আন্দোলনও সৌদি আরবের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা ও লোহিত সাগরের তেলের ট্যাংকারে বা গ্যাসফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘভিত্তিক শান্তি আলোচনা কয়েক বছরেও সাফল্যের মুখ দেখেনি। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) বলছে, ২০২২ সালে ইয়েমেনের তিন কোটি মানুষের এক কোটি ৪৫ লাখ মানুষই খাদ্যের অভাবে কষ্টে থাকেন। দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের প্রায় অর্ধেকই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সূত্র :  সমকাল

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন