নিউইয়র্ক     রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহিংসতার কারণে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়ছেন ডাক্তাররা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩ | ০২:৪০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ | ০২:৪০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সহিংসতার কারণে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়ছেন ডাক্তাররা

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনেক ডাক্তারই কর্মস্থলে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়েছে৷ এ কারণে চিকিৎসকদের দেশ ছাড়ার প্রবণতাও অনেক বেড়েছে।

গত গ্রীষ্মে মিশরে এক ব্যক্তি ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্মীদের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। সুয়েজ খালের নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে এক গর্ভবতী নারীর স্বামী একজন গাইনি ডাক্তারকে মারধরের চেষ্টা করে। কারণ, ঐ দম্পতি ডাক্তারের বলা বাচ্চার সম্ভাব্য জন্ম তারিখের সাথে একমত হতে পারেনি।

টিউনিশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি বিভাগের এক তরুণ চিকিৎসকের দিকে রোগীরা চেয়ার ছুঁড়ে মারে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত সেই চিকিৎসককে অফিসেই ‘বন্দি’ থাকতে হয়। তার অপরাধ তিনি রোগীদেরকে জরুরি বিভাগের পরিবর্তে বহির্বিভাগের যেতে বলেছিলেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, ইরাকে পরিবারের সদস্যরা ও সহায়তাকারীরা রোগীর সাথে হাসপাতালে যায়। রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকরা প্রায়ই হামলার শিকার হন, নানা ধরনের হুমকিও দেয়া হয় তাদের।

এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে বাগদাদের হাসপাতালগুলোতে ৮৭ শতাংশ চিকিৎসক হুমকি অথবা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার ৯৪ শতাংশ হয়েছে রোগী বা তাদের পরিবারের দ্বারা।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের উপর চালানো জরিপ বলছে, ৬৭ থেকে ৮০ শতাংশ চিকিৎসক ও নার্স কর্মক্ষেত্রে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তরুণ ডাক্তাররা, বিশেষ করে যাদের বয়স ৪০ বছরের কম, তারা এই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন বেশি। করোনা মহামারির সময় এসব অনেক বেড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও আশেপাশের দেশগুলোতে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা মহামারির কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়, যার ফলে চিকিৎসকরা অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।যেমন, সম্প্রতি মিশরীয় মেডিকেল সিন্ডিকেট ঘোষণা করে যে, ২০২২ সালে দেশে পদত্যাগকারী চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তারা বলছে, গত বছর ৪ হাজার ২৬১ জন চিকিৎসক পদত্যাগ করেন এবং দেশের বাইরে কাজ করার অনুমতি চেয়ে সার্টিফিকেটের আবেদন করেন।

তুরস্কেও একই পরিস্থিতি : টার্কিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বিদেশে চাকরির আবেদন করার জন্য ২০২১ সালে

১,৪০৫ জন স্থানীয় চিকিৎসক সার্টিফিকেট চেয়েছিলেন।

‘‘আমরা আমাদের চিকিৎসকদের হারাচ্ছি, কারণ, চিকিৎসকদের প্রতিদিন সহিংসতার সাথে জীবনযাপন করেও তারা তাদের শ্রমের পুরষ্কার পায় না,’’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সেবনেম কোরুর ফিনকানচি। তিনি মনে করেন, দেশত্যাগ করা ডাক্তারদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকবে।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে টিউনিশিয়া থেকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ চিকিৎসক দেশ ছেড়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮০০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, ২০২১ সালে লেবাননের প্রায় ৪০ শতাংশ ডাক্তার অভিবাসী হয়েছেন। চলতি বছর লেবাননের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনগুলো জানিয়েছে, অবশিষ্ট ডাক্তারদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

ইরাক, মরক্কো, জর্ডান, ইরান এবং কুয়েতের পরিস্থিতিও একইরকম। সুত্র জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন