নিউইয়র্ক     শনিবার, ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমকামীদের শাস্তি নিয়ে ইরাকে বিতর্ক

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সমকামীদের শাস্তি নিয়ে ইরাকে বিতর্ক

সমকামীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইন পাশ করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক ৷ ইতিমধ্যে বিলের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে ৷

সমালোচকেরা বলছেন, দেশটির বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণকে দৃষ্টি সড়িয়ে নিতে সমকামীদের নিয়ে এমন আইন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার ৷

দেশটির বিদ্যমান ‘ল অন কমবেটিং প্রস্টিটিউশন ১৯৮৮’ নামে আইনের সংস্কার করার লক্ষ্যে খসড়া আইনটি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন সাংসদ রাদ আল মালিকি৷ আইনটি পাশ হলে, সমলিঙ্গের ব্যাক্তিদের সম্পর্ক শাস্তিু হবে মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড ৷ শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত এই আইন ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ৷ ‘

নারীদের বেশ ধারণকারী’ ব্যক্তির তিন বছরের কারাদণ্ড বা সাত হাজার ৭০০ ইউরো (প্রায় আট লাখ টাকা) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ৷ নারীদের বেশ ধারণকারী বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা নারীদের পোশাক পরিধান করেন বা সাজসজ্জা করেন ৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এলজিবিটিকিউ গবেষক রাশা ইউনেস বলেন, আইনটি হঠাৎ করেই করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয় ৷ এটি ইরাকে চলমান জন অসন্তোষের সাথে সম্পর্কিত ৷ এটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন দেশের জনগণের মূল দাবিদাওয়া মেনেনিতে গিয়ে সরকারকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, বলেন তিনি ৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের সম্পর্ককে আইনে যৌন বিকৃতি বলে ব্যাখা করা হয়েছে৷ তাছাড়া যারা ‘সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে’ তাদের সাত বছরের জেল এবং ১০ হাজার ৬০০ ইউরো জরিমানার কথা বলা হয়েছে ৷ কোন ধরনের আচরণ সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে সে বিষয়টি আইনে স্পষ্ট করা হয়নি ৷

দায়মুক্তির সংস্কৃতি

সমকামীদের সম্পর্কের বিরোধিতায় ইরাকে এখন পর্যন্ত কোনো আইন নেই ৷ তবে সরকার এলজিবিটিকিউদের বিরুদ্ধে মূলত ‘নৈতিকতা আইনকে’ ব্যবহার করছে ৷

এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘‘সশস্ত্র গ্রুপ এবং ব্যাক্তি পর্যায় থেকে কয়েক দশক ধরে এলজিবিটিকিউ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা চলছে ৷ এমন হামলা ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটছে এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না ৷”

এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই আইন ‘আগুনে তেল ঢালার’ মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে, বললেন ইউনেস ৷

ইরাকুয়্যার নামে ইরাকের একমাত্র এলজিবিটিকিউ সংস্থার প্রধান আমির আসোর বলেন, ‘‘আইনটি পাশ হলে সমকামীদের উপর সাধারণ মানুষের হামলা আরো সহজ হবে ৷”

তিনি বলেন এই আইনটি ইরাকের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী যেখানে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের সব ধরনের মানুষের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে ৷

অবশ্য এই আইনটি পাশের জন্য বেশ কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছে ইরাক সরকার ৷ গত আগস্ট মাসে দেশটির কমিউকেশন অ্যান্ড মিডিয়া কমিশন একটি নির্দেশনা জারি করে ৷ নির্দেশনায় গণমাধ্যমগুলোকে সমকামী কথাটির পরিবর্তে ‘যৌন বিকৃতি’ ‘sexual deviance’ কথাটি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে ৷ সেইসঙ্গে লিঙ্গ শব্দটি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷

এদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত ইরাকি কুর্দিস্তানে ইতিমধ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ৷ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সেখানকার পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয় ৷ বিলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিা যদি সমকামিতাকে উৎসাহিত করে তাহলে তাদেরকে শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে ৷

ইরাকের এলজিবিটিকিউ সদস্যরা বরাবরইতাদের উপর নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন ৷

কালচার ম্যাগাজিন রাসেফ ২২-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ৪৩ বছরের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘‘লিঙ্গের পরিচয়ের কারণে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে যখন শুনতে পাই আমার খুব খারাপ লাগে ৷ আর আমি ভয় পাই৷ কারণ আমি জানি যে আমিও এমন বিপদে আছি ৷ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কার ছাড়া বা এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই ৷”

লেখক আমরো আল-কাধি অবশ্য মনে করেন সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি ইরাকের মানুষের যে অনীহা বা বিরাগ সেটি আরব সমাজের পাবারিকির যে কাঠামো তার মধ্যেই নিহিত আছে ৷

আরবে লিজিবিটিকিউ নিয়ে নিজের লেখা বইয়ে আল-খাদি জানান ছোটবেলায় তার মা তাকে বলতেন, ‘‘তুমি আসলে তুমি নও, তুমি হচ্ছ আমি ৷”

‘‘অবশ্যই আমি আরবের সব পরিবারের কথা আমি বলতে পারি না ৷ কিন্তু ইরাকের যেই সমাজে আমি বড় হয়েছি সেখানে বাবা-মায়েরা সন্তানকে নিজেদের সামাজিক প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখেন ৷ একজন ব্যাক্তি যার নিজের ইচ্ছা এবং স্বাধীনতা থাকতে পারে সেভাবে দেখা হয় না ৷ বরং একটি বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে দেখা হয় যার লক্ষ্য হবে বৃহত্তর পারিবারিক ইউনিটি নিশ্চিত করা ৷”

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংস্থা টি ব্রাউনের প্রধান নির্বাহি বলেন, ইরাকে যা হচ্ছে তা আসলে নতুন কিছু নয়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এটি একটি নিষ্ঠুর শাস্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷ ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

শেয়ার করুন