নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর চেয়েও বেশি

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩ | ০১:১৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ | ০১:১৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর চেয়েও বেশি

সারা দেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে। এমনকি রাজধানী ঢাকাকেও তা ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উপেক্ষা করার মতো নয় বলে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৪২৬ জন। এ চিত্র চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মে পর্যন্ত। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা বাদে সারা দেশে চলতি বছর ১ হাজার ৫৩৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৯৭১ জন ও ঢাকার বাইরে ৫৬২ জন। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১ হাজার ৬৬ জন। গত বছরও সেখানে ১৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মূলত সীমিত জায়গায় থাকে। সেখানে পানি সরবরাহ না থাকায় তা জমা করে রাখতে হয়। জমা করে রাখা সেই পরিষ্কার পানি এডিস মশা প্রজননের জন্য ভালো জায়গা। এ নিয়ে অবশ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। কেননা মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা না গেলে বৃষ্টির মৌসুমে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতে পারে। জনবসতি যেখানে বেশি সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণের গৃহায়ন অপরিকল্পিত। এডিস মশা তাই এ এলাকায় বেশি থাকতে পারে। উত্তরের চেয়ে যদিও সরকারি বড় বড় হাসপাতাল দক্ষিণে। এতে উত্তর বা দক্ষিণকে আলাদাভাবে বলার সুযোগ নেই। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন প্রমুখ। এদিকে ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকারের নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ নিলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি এমন হুঁশিয়ারি দেন।

এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এতে নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু সংক্রমণের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফি ৫০০ টাকা ও সরকারি হাসপাতালগুলো নিতে পারবে ১০০ টাকা। ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। সে অনুযায়ী সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। এতে প্লাটিলেট কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তারও নির্দেশনা রয়েছে।’ সরকারিভাবে ২১টি কেন্দ্রে প্লাটিলেট সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১১টি সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হলে আবাসিক চিকিৎসক ও আরএমওর কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা রাখতে হবে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করতে হবে, পরীক্ষাগার খোলা রাখতে হবে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে খুলতে হবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সূত্র : বণিক বার্তা

শেয়ার করুন