কীভাবে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালাতে হয়, আহত সদস্যকে উদ্ধার কিংবা আত্মরক্ষার নানা কৌশল- সবই শেখানো হচ্ছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাইরে একটি পাহাড় ঘেরা বরফ আচ্ছাদিত এলাকায়। যাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা সবাই ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে নবাগত। তাঁদের কাউকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়নি; বরং নিজেরা স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক প্রতিশোধ নিতে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, সম্প্রতি ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের হাতে এভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা মস্কো ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চেচেন, ক্রিমিয়ার তাতার এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের নাগরিকরা। মস্কোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিংবা রাজনৈতিক নানা কারণে নির্যাতিত, এমনকি নির্বাসিতও রয়েছেন এই দলে।
ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডাররা বলে আসছেন, তাঁদের সেনার অভাব নেই। কিন্তু এর পরও তাঁরা বিদেশি নাগরিকসহ কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবককে স্বাগত জানিয়েছেন বাহিনীতে। স্বেচ্ছায় যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চেচেনদের মতো অনেকেই রাশিয়া থেকে উদ্বাস্তু। অন্যরা জর্জিয়ার মতো আশপাশের দেশগুলো থেকে এসেছেন।
স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যাওয়াদের অনেকেই এরই মধ্যে ইউক্রেনে বসবাস করছেন। কেউ কাজের জন্য, আবার কেউ রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে আশ্রয় চেয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু স্বেচ্ছাসেবক ভিসা এবং দেশটিতে থাকার অনুমোদন পেয়েছেন। তবে তাঁদের এই অংশগ্রহণকে সন্দেহের চোখে দেখছেন কিছু কমান্ডার।
মস্কোর বিরুদ্ধে চেচনিয়ায় দুটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মাদিয়েভও স্বেচ্ছায় নেমেছেন ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে। তিনি নব্বইয়ের দশকে রাশিয়া থেকে চেচনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মাদিয়েভ ২০১৬ সাল থেকে ইউক্রেনে থাকছেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন আগ্রাসন থেকে থামানো না গেলে ইউরোপের আরও অনেক দেশকে হুমকিতে ফেলবে মস্কো।
এদিকে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ জোরদার করেছে রাশিয়া ও এর মিত্র বেলারুশ। এর লক্ষ্য আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনাদের প্রস্তুত করা। মস্কো হয়তো উত্তর থেকে ইউক্রেনের নতুন হামলায় বেলারুশকে ব্যবহার করতে পারে- ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গত মাসে। তাদের এই জল্পনার মধ্যেই দুই মিত্র উচ্চতর সামরিক সহযোগিতা শুরু করেছে।
অন্যদিকে অর্থোডক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে মস্কোর একতরফা ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির শেষ হতেই শনিবার দিবাগত রাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভে একজন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অঞ্চলটির গভর্নর। এই যুদ্ধবিরতির মধ্যে এ পর্যন্ত দুই ইউক্রেনীয় নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন কিয়েভের কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী হয়েছে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর। জার্মানিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্যাথারিনা লুম্প বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আরও প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দেশটির মধ্যেই বাস্তুচ্যুত।
এদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন, যুদ্ধের কারণে গোটা দেশই এখন মাইনফিল্ডে পরিণত হয়েছে। মোট ভূমির ৪০ ভাগের বেশি এলাকায় মাইন রয়েছে। ফলে এটি কেবল মানুষের যাতায়াতকেই কঠিন করছে না, চাষাবাদেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।