নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা’- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০২:০৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ০২:০৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা’- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৬ জুলাই বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়েছে?’

বৃহস্পতিবার ( ৬ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত।’

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন ২০০১ এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন ধর্ষণ হয়েছিল তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কেন কথা ছিল না কেন? দেশি- বিদেশি সকলের বেলায় আমি বলব। অনেকে আছেন আমাদের ছবক দেন। মানবাধিকার শেখান। মানবাধিকার বঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা ওঠায়। আমরাই তো মানবাধিকার বঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তারা ২০০১ দেখেননি? ১৫ আগস্ট দেখেননি? ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এ দেশে কী ছিল দেখেননি? তখন তারা চোখেও দেখেননি, কানেও শুনেননি কী কারণে- তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। মানবাধিকারের কথা বলে- আজকে রোহিঙ্গারা যখন নির্যাতিত হচ্ছিল, ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল, তখন আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মানবিক কারণে এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নিয়েছি। এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কী হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন?’

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে। এ কথা বলে কীভাবে? সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায়, বহু মানুষ খুন হচ্ছে। এমনকি আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি করে করে শিশুদের হত্যা করছে। স্কুলে, শপিংমলে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। এমনকি বাঙালি মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই করতে গিয়ে হত্যা করছে। প্রতিদিনই তো তাদের প্রতিটি স্টেটে গুলি করে হত্যা করছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করছে। নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা তাদের আগে করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক। সেটাই তাদের করা উচিত। যার যার দেশের। ইউক্রেনে যুদ্ধটা বাধিয়ে দিয়ে আজকে সেখানে হাজার হাজার নারী পুরুষ রিফিউজি, কষ্ট পাচ্ছে। সিরিয়াতে কীভাবে গোলাগুলি; প্যালেস্টাইনেও। একের পর এক বোমা হামলা। এয়ার হামলাও করছে। সেটা নিয়ে কারো কোনো কথা নেই কেন? সেখানে কী মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে না?’

বিএনপি’র ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলনের সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, ‘জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা বিএনপির আন্দোলন। অবরোধ দিয়ে রেখেছে। সেই অবরোধ এখনো তোলেনি। অবরোধ দিয়ে মানুষকে হত্যা করা। এই হলো বিএনপির চরিত্র। আজ তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি; মানবাধিকারের কথা শুনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আছে কিছু আঁতেল শ্রেণি। কথা বিক্রি করে খাওয়া অভ্যাস। যত মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। এই দেশে নানারকম অপরাধ করে করে যারা বিদেশে আশ্রয় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যত অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

সদ্য অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচন হবে না যারা বলে, মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো (বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর)। গাজীপুরে আমরা হেরেছি, বাকি চারটাতে আমরা জিতেছি। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? আমরা গেছি সেখানে ভোট চুরি করতে? করি নাই তো। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়েছে? ঢাকায় সিটি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোহাম্মদ হানিফ জিতেছিল। এরপর লালবাগে বিএনপি গুলি করে আওয়ামী লীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তো এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।’

আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সব উপনির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। সেটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মানুষের ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। সেটাই করে যাব। জনগণ বারবার অনেক বাধা অতিক্রম করেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তার সুফল দেশের জনগণই পাচ্ছে।’

শেয়ার করুন