নিউইয়র্ক     রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্পের নেপথ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০১:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০১:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ভূমিকম্পের নেপথ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন

ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে নিজের সাইকেল বের করে আনছে এক শিশু।

ভূমিকম্পে আমার দেশ তুরস্ক এবং প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঠিক কোন ঘটনা থেকে এই ভয়ানক বিপর্যয়ের সূত্রপাত, তা আমরা এখনও জানি না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে সুনামি এবং অগ্ন্যুৎপাতের পাশাপাশি এ ধরনের কম্পনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আমরা জানি। ২০১২ সালেই ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূপদার্থবিদ্যা এবং জলবায়ু বিপর্যয় বিভাগের অধ্যাপক বিল ম্যাগুয়ের বলেছিলেন, কোনো ‘ফল্ট’ যদি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে যায় বা ফেটে পড়ার মতো অবস্থায় চলে যায়, তাহলে করমর্দনে যতটুকু চাপ লাগে, ততটুকু শক্তিই যথেষ্ট সে ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য।

এ ছাড়াও নাসার বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে গলে যাওয়া হিমবাহ কয়েক দশক ধরে আলাস্কায় ভূমিকম্প ঘটাচ্ছে। এই প্রভাব শুধু উত্তর মেরুতে সীমাবদ্ধ নয়। গলতে থাকা হিমবাহ পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরিভাগজুড়ে ওজন বণ্টনের যে হিসাবটি ছিল, তা বদলে দিচ্ছে। ফলে গ্রহের টেকটোনিক প্লেটে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটছে, যা আরও ভূমিকম্প ঘটাতে পারে, জাগিয়ে তুলতে পারে আগ্নেয়গিরিকে, এমনকি পৃথিবীর অক্ষরেখার নড়চড়কেও প্রভাবিত করতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট পরিণতি ‘আমাদের ভবিষ্যৎ ভূমিকম্প অস্থিরতা বিষয়ে সতর্ক করছে।’

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি শুধু ভূমিকম্পের বিষয় নয়। গত পাঁচ দশকজুড়ে জলবায়ু এবং আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের। হতাহতদের ৯১ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশের। প্রতিনিয়ত এটি আরও তীব্রতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। জলবায়ুর এ জরুরি অবস্থার জন্য দায়ী মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান। তারপরও প্রায় পুরোপুরিভাবেই দায়মুক্তি উপভোগ করে তারা। আবার রেকর্ড মুনাফাও অর্জন করে। অথচ, ঠিক সে সময়টিতেই গোটা বিশ্বজুড়ে গৃহস্থালী খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক গবেষণার তথ্যানুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ভিত্তিক খনিজ, তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ‘আরও আক্রমণাত্মক পন্থায়’ আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে। এখানে সমস্যাটি পদ্ধতিগত। দীর্ঘদিন ধরেই মানুষ এবং বিশ্বের বদলে নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ও তাদের মিত্ররা। ফলে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে যখন বলেন, ‘যেসব জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ২০৩০ নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্য নামিয়ে আনার নির্ভরযোগ্য পথ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের ব্যবসাতেই থাকা উচিত নয়’, তখন তা অবাক করার মতো কিছু মনে হয় না।

বিশ্বের দেশগুলোর সরকারের উচিত এ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া এবং গ্রহের বিরুদ্ধে মুনাফা লুটে ব্যস্ত এই রাক্ষসের অবসানের লক্ষ্যে একাট্টা হওয়া। এদের মামলার কবলে না পড়ে সরকারের উচিত বিশ্বজুড়ে কীভাবে অগণিত ভুক্তভোগীকে ক্ষয়ক্ষতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে, সে বিষয়টি বিবেচনা করা। না হলে আমার দেশে যা হয়েছে, আমাদের সে রকম আরও অনেক মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে হবে। সুত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

শেয়ার করুন